মা-মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ, পরিণতিতে হত্যাকাণ্ড

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মা-মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার ধর্ষণের কারনে হত্যা করা হয় সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ল’ ফার্মের প্রধান হিসাবরক্ষক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনকে (৪৪)।
  • শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো: মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, এ ঘটনায় ৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন শফিকুল ইসলাম ওরফে অরণ্য (২৫), তার স্ত্রী মেহজাবিন মুন (১৮), শাশুড়ি মৌসুমী ইসলাম ওরফে জোস্না (৪০) ও খালা শাশুড়ি শিউলী (২৮)।
গত ২০ আগস্ট সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মুজাহিদনগর এলাকায় রাস্তায় পাশ থেকে গলাকাটা অবস্থায় আমিনুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
  • সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমিনুল রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মুরাদপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে একা থাকতেন। স্ত্রী সন্তানরা থাকেন বরিশালের মুলাদি থানার গলইভাঙ্গা গ্রামে।  
ঘটনার দিনই নিহতের বড় ভাই রেজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পরই আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে চট্রগ্রামের হাটহাজারী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
  • তিনি আরো জানান, নিহত আমিনুল ইসলাম আসামি শরিফুল ইসলাম অরণ্যের স্ত্রী মুনের বিয়ের আগে গৃহশিক্ষক থাকাকালে জোরপূর্বক মুনকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি ভিডিও করা আছে এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মুনকে বহুবার ধর্ষণ করে।  
এক সময় মুনের মা জোস্না মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনাটি জেনে ফেলেন এবং আমিনকে এসব করতে নিষেধ করে। আমিন একইভাবে জোস্নাকেও জিম্মি করে ধর্ষণ করে। এরই মধ্যে অরণ্যের সঙ্গে মুনের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের পরও আমিন আগের মতো অরণ্যের স্ত্রীর তথাকথিত কাল্পনিক নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অরণ্যের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে অনৈতিক দৈহিক মেলামেশার প্রস্তাব দেয়।
  • ঘটনচক্রে অরণ্য বিষয়টি জেনে ফেলে। এ অবস্থা হতে পরিত্রাণ পেতে অরণ্য, অরণ্যের শাশুড়ি জোস্না, খালা শাশুড়ি শিউলি ও স্ত্রী মুন মিলে গত ১৯ আগস্ট বিকালে জোস্নার মুরাদপুরের ভাড়া বাসায় বসে আমিনুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এজন্য অরণ্য একটি চাকু ও একটি চাপাতি কিনে আনে। পরে জোস্না ও শিউলি একটি গাড়ি ভাড়া করে আমিনকে সঙ্গে নিয়ে মুনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কেরানীগঞ্জের মুজাহিদনগরে নিয়ে আসে। এদের অনুসরন করে মোটরসাইকেলে চড়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় অরণ্য।
রাত ১০টার দিকে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে তারা হাঁটতে থাকলে অরণ্য চাকু দিয়ে পেছন থেকে আমিনের ঘাড়ে সজোরে আঘাত করে। এ সময় আমিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অরণ্য পিছু তাড়া করে তাকে ধরে ফেলে এবং চাপাতি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে চাকুটি ঘটনাস্থলের পাশে একটি ডোবায় ফেলে মোটরসাইকেলযোগে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, আসামিদের স্বীকারোক্তি মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, চাপাতি, মোটরসাইকেল ও কিলিং মিশনের সময় অরণ্যের পরিহিত রক্তমাখা জামাটি উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম সোহাগ জানান, প্রাথমিকভাবে আসামিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নিহত আমিনুলের স্ত্রী হুমায়রা জাহান সাংবাদিকদের বলেন, আমি তদন্তে অসন্তুষ্ট। পাওনা টাকা চাওয়ায় আসামিরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ