নায়িকা মাহির সঙ্গে ছবি, চেয়ারম্যানকে হুমকি দিলেন এমপি ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কলেজের অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আলোচিত হওয়া রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গালাগাল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী চেয়ারম্যানের নাম সোহেল রানা। তিনি গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউপির চেয়ারম্যান। গতকাল বুধবার সকালে সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। সোহেল জানিয়েছেন, তিনি এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ সম্প্রতি ঢাকায় ছিলেন। সেখানে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়, ছবি তোলা হয়। এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেখেই তাঁর ওপর চটেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।
চেয়ারম্যান সোহেল রানা জানান, মঙ্গলবার উপজেলা কৃষি অফিসের একটি অনুষ্ঠান ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রও মঞ্চে ছিলেন। অনুষ্ঠানে যান গোদাগাড়ীর নয়টি ইউপির চেয়ারম্যানও। তবে এমপির সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় বলে তিনি মঞ্চে ওঠেননি। দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে এমপি তাঁর সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন ‘এই ব্যাটা এইদিকে আয়’ বলে তাঁকে ডাকেন।
সোহেল রানা বলেন, ‘এমপি মহোদয়কে আমি আগে থেকেই কাকা বলে ডাকি। তিনি ডাকলে আমি সালাম দিয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়াই। কিন্তু তিনি আমাকে গালি দিয়ে বলেন, “নায়িকা মাহি কে? তাঁর সাথে ছবি তুলিস? আমি তোকে দেখেই ছাড়ব।” এ ধরনের হুমকিতে আমি আতঙ্কিত। যে কোন সময় আমার যে কোন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।’
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। তবে তাঁর জন্ম রাজশাহীর তানোরের মুণ্ডুমালায়। রাজশাহী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি তিনি মাঠে নেমেছিলেন। তবে মঙ্গলবার থেকে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর) আসন থেকে আসন্ন উপনির্বাচনে অংশ নিতে গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপির এমপি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়েছে। এখানে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন নায়িকা মাহি।
এদিকে সোহেল রানার সঙ্গে আগে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পর্ক ভালোই ছিল। রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপির মালিকানাধীন ‘থিম ওমর প্লাজা’ থেকে তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন। তবে সোহেল রানা এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়ান। তখন থেকেই এমপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব। দীর্ঘ দিন ধরে ওমর ফারুকের সঙ্গে দা-কুমড়ো সম্পর্ক জেলা
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদেরও। তাই মাহির সঙ্গে এ দুজনের ছবি দেখেই চটে যান এমপি ফারুক।
যদিও এই সোহেল রানাও নানা কাণ্ডে বিতর্কিত। এলাকায় পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী নামে। কয়দিন আগেও তার বাবা হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হোন।
চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, থিম ওমর প্লাজায় তাঁর রেজিস্ট্রি করা ফ্ল্যাট হলেও সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি সেখানে ভয়ে যেতে পারেন না। থিম ওমর প্লাজায় তিনি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই দোকান ছেড়ে দিলেও জামানতের সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত পাননি। ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে এমপি কিছুদিন আগে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি পরিষদে যেতে পারছিলেন না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এখন অফিসে যেতে পারছেন।
সোহেল রানাকে হুমকি ও গালিগালাজের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ও একটা মাদক ব্যবসায়ী। সে আমার কাছে আসছিল। আমি তাঁকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু ঘটনা আসলে সেখানে ঘটেনি।’
উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেধড়ক মারধর করেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এ নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে অধ্যক্ষকে মারধরের সত্যতা যায়।
স/আর