মাসে গড়ে ৭০ বাস দুর্ঘটনা : মানুষ মরছে, দায় নিচ্ছে না কেউ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। শিরোনাম হয় মৃত্যুর সংখ্যা। সেই সংখ্যা একক থেকে দশক, দশক থেকে কখনো কখনো শতকের ঘরে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু এর দায় নিতে চায় না কেউ, চলে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর খেলা।

গত ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় পতিত হয়। চালকসহ মারা যান ২০ যাত্রী। একসঙ্গে এত লোকের প্রাণহানি নতুন করে নিরাপদ সড়কের বিষয়টি সামনে এনেছে।

বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রতিবারই এর পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করা হয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণ ও বিশ্লেষণ নিয়ে কথা বলা মানে শুধু ‘উপসর্গ’ নিয়ে কথা বলা। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে যাদের বিষয়গুলো দেখার কথা, তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না

যাত্রী অধিকার ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর তথ্য বলছে, প্রতি মাসে সারা দেশে শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৭০টি থাকে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনা। ফলে মৃতের সংখ্যাটাও বেশি হয়।

বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রতিবারই এর পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করা হয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণ ও বিশ্লেষণ নিয়ে কথা বলা মানে শুধু ‘উপসর্গ’ নিয়ে কথা বলা। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে যাদের বিষয়গুলো দেখার কথা, তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না!

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, গত দুই মাসে সড়কে ১৭৮টি বাস দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত ও ৭৪৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৯৯টি বাস দুর্ঘটনায় ৯৭ জন নিহত ও ৩৬৯ জন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৯টি বাস দুর্ঘটনায় ৮৫ জন নিহত ও ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, গত দুই মাসে সড়কে ১৭৮টি বাস দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত ও ৭৪৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৯৯টি বাস দুর্ঘটনায় ৯৭ জন নিহত ও ৩৬৯ জন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৯টি বাস দুর্ঘটনায় ৮৫ জন নিহত ও ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন

সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২২ সালে ছয় হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনা ছিল এক হাজার ৫০৬টি। এসব দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন বাস আরোহী নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সাল থেকে দুর্ঘটনার ‘মাসিক পরিসংখ্যান’ প্রকাশ করতে শুরু করেছে দেশের সড়ক পরিবহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ৩০৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনা ৭৪টি।

দুর্ঘটনার পর অনুসন্ধানে নানা কারণ বেরিয়ে আসে। চলে নানা বিচার-বিশ্লেষণও। শেষ বিচারে দোষীসাব্যস্ত হন চালক, না হয় মালিক। কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, তারা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছেন কি না— বিষয়টি সবার নজর এড়িয়ে যায়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ১৯ মার্চ ইমাদ পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর কারণ হিসেবে ‘বাসটির অতিরিক্ত গতি’-কে দায়ী করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম বলেন, অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। যদি গতি নিয়ন্ত্রণ করে বাসটি চলত তাহলে ২০ জনের জীবন এভাবে ঝরে যেত না

গত ১৯ মার্চ ইমাদ পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর কারণ হিসেবে ‘বাসটির অতিরিক্ত গতি’-কে দায়ী করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। যদি গতি নিয়ন্ত্রণ করে বাসটি চলত তাহলে ২০ জনের জীবন এভাবে ঝরে যেত না।’

অন্যদিকে, শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চালক কোনোরকম বিশ্রাম না নিয়ে বাসটি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ ৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালানোর কারণে ক্লান্ত ছিলেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ইমাদ পরিবহনের অপারেশন ম্যানেজার ওয়াহেদুল ইসলাম পলু মিয়া বলেন, আমাদের প্রতিটি বাসে জিপিএস লাগানো আছে। আমাদের যে গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে সেটির গতি ছিল ঘণ্টায় ৯০-৯৫ কিলোমিটার। সামনের বাম চাকা ফেটে যাওয়ায় চালক যথাসাধ্য চেষ্টা করেও বাসটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গার ৫৫ কিলোমিটার সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্দেশিত আছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। অথচ দুর্ঘটনার শিকার গাড়িটির গতি ছিল ৯০-৯৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ অতিরিক্ত গতিতে চলছিল ইমাদ পরিবহনের বাসটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘চালকের একটানা গাড়ি চালানো একটা উপসর্গ মাত্র। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে যত ভারি গাড়ি বা বাণিজ্যিক গাড়ি আছে সেই তুলনায় বিআরটিএ চালক তৈরি করতে পারেনি। ১০-১৫ বছর আগে থেকেই মার্কেটে ভারি গাড়ি চালানোর লোক নেই। অথচ বিআরটিএ ভারি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে যাচ্ছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, আমরা চালক তৈরি করতে পারিনি, আপনারা যেভাবে পারেন যাকে খুশি তাকে দিয়ে গাড়ি চালান। আমরা দেখছি, যে অল্প সংখ্যক ড্রাইভার আছেন তাদের দিয়ে এসব গাড়ি চালানো হচ্ছে। সুতরাং এ দায় রেগুলেটরি অথরিটি হিসেবে বিআরটিএর ঘাড়ে যায়। কারণ, তারা চালক বানাতে পারেনি। তাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে ভারি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেওয়া।’

‘কোনো দুর্ঘটনা হলে আমরা সহজ-সরল দৃষ্টিতে যা দেখি, এটা কিন্তু আসল কারণ নয়। পুরো পৃথিবী যে কনভেনশন ফলো করে, পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানো যাবে না; হাইকোর্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী— সবাই একই কথা বলছেন, যেন পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানো না হয়। আমরা সেটা মানছি কি? আধুনিক যুগে আমরা কখনও উপসর্গের দিকে তাকিয়েছি কি না, পুলিশ কেন এগুলো ধরে না?’

তিনি বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশ তৈরি করা হয়েছে যেন রাস্তাঘাটে অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হয়। প্রধানমন্ত্রী যে বলেছিলেন চালকরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবে না, এটা কি হাইওয়ে পুলিশ বাস্তবায়ন করেছে? এটা যদি তারা বাস্তবায়ন করত, তাহলে চালক-মালিকরা কিন্তু সুযোগসন্ধানী হতেন না।’

এ বিশেষজ্ঞের মতে, ‘একটা ঘটনা ঘটার পর আমরা বিষয়টি জানলাম। তাহলে এগুলো দেখার দায়িত্ব কার ছিল? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও আছে। আমার মনে হয়, এখানে আমূল পরিবর্তন দরকার। সেটি করতে হবে গোড়া থেকে। এখন আমরা যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি, এগুলো মাত্র উপসর্গ। উপসর্গের মতো একমাত্র চালকই যাবে জেলখানায় অথবা মালিক। কিন্তু বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ— যারা ভুল করছে, যারা দায়িত্ব পালন করছেন না, তারা কিন্তু কখনও গণনাযোগ্য হবেন না।’

ট্রেনিং দিয়েই কোটি টাকার গাড়ি চালকের হাতে দেওয়া হয় : গ্রীন লাইন
চালকদের ভুলে ঘটছে দুর্ঘটনা— এমন অভিযোগ সর্বত্র। একটি পরিবহন কোম্পানি চালকদের কীভাবে নিয়োগ দেয় এবং তাদের কী নির্দেশনা দেওয়া হয়— জানতে চাওয়া হয় গ্রীন লাইন পরিবহন ও ওয়াটার ওয়েজের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তারের কাছে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পাঁচ থেকে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চালকদের আমরা নিয়োগ দিয়ে থাকি। প্রথমে আমাদের নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টারে তাদের ট্রেনিং করাই। তারপর তাদের হাতে কোটি টাকার গাড়ি তুলে দিই। তাদের প্রতি আমাদের নির্দেশনা থাকে গাড়িগুলো কীভাবে চালাতে হবে।’
‘সরকারি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত চালকদের জন্য কোনো ট্রেনিং সেন্টার চালু করা যায়নি। এ দেশে প্রায় ৫০ লাখ চালক গাড়ি চালান। শুধু বাসমালিক ও সংগঠনের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে চলে গেলেন পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে। কিন্তু এসব চালকদের কী হবে? তাদের তো স্মার্টের কাতারে নিয়ে আসতে হবে।’

‘এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর চালকরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না’— উল্লেখ করে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ করে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেভাবে সড়কটুকু মনিটরিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। এটা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা যায়। কেউ ওভার স্পিডে গেলে তাকে জরিমানার আওতায় আনা যেত। তার স্পিড নিয়ন্ত্রণ করা যেত। বাংলাদেশে এটিই প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। অন্তত আর কোথাও না হোক, এখানে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।’

নিজ কোম্পানির চালকদের নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা চালকদের বলে দিয়েছি, রাস্তায় যদি ওভার স্পিডিংয়ের জন্য কোনো মামলা হয়, সে মামলার জরিমানার অর্থ কোম্পানি কখনও বহন করবে না। রাস্তায় নির্দেশনা আছে ৮০ কিলোমিটার স্পিড সর্বোচ্চ, সেখানে ৯৫ কিলোমিটার স্পিডে গাড়ি চালিয়ে মামলা খেলে এটার দায়ভার তো চালককে বহন করতে হবে। বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি ওভার স্পিডিংয়ে উৎসাহিত করে না।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘শুধু চালক ও মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশে চালক সংকট আছে। আর যেসব চালক তৈরি হচ্ছে তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত না। তারা শুধু ওস্তাদের দেখানো পথে শিখে এবং চালক হয়ে যায়। ফলে রোড সাইন ও স্পিড লিমিট সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা থাকে না। আবার হঠাৎ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে সেখানে উপস্থিত বুদ্ধির কিছু বিষয় থাকে। এগুলোও তারা তেমন জানেন না। সবমিলিয়ে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থার আপাদমস্তক যে অবস্থা, এগুলো মাথায় নিয়ে কখনওই নিরাপদ সড়ক আশা করা যায় না।’

‘বাংলাদেশের বাজারে টিউনিং টায়ারের একটা ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ পুরাতন ও মেয়াদোত্তীর্ণ টায়ারগুলো টিউনিং করে বিক্রি করা হয়। এটা আসলে দুর্ঘটনা ফেরি করে বিক্রি করার মতো। এ বিষয়ে মালিকদের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। এটা হলে আমরা যে শুনি— চালক ২০ ঘণ্টা, ২৫ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েছেন; এটি বন্ধ হবে। আর দক্ষ চালক তৈরিতে বিআরটিএকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ  বলেন, ‘আমরা যতটা জেনেছি, গাড়িটির (দুর্ঘটনায় পতিত ইমাদ পরিবহনের গাড়ি) চলাচলের কোনো অনুমতি ছিল না। বিআরটিএ বন্ধ রেখেছিল। সেক্ষেত্রে মালিক গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে অন্যায় করেছেন। পত্রিকায় দেখলাম চালক টানা ৩৩ ঘণ্টা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মালিক চালককে দিয়ে কখনও জোর করে এটি করাবেন না। চালকরা টানা কয়েক দিন গাড়ি চালান, আবার কয়েক দিন বিশ্রাম নেন। তবে, এটিও হওয়া উচিত নয়। চালকদের নিয়মিত বিশ্রামের প্রয়োজন।’

‘আমরা সবসময় মালিক-চালকদের বলে থাকি, সেফটি ফাস্ট। ইনকাম পরে, আগে সেফটির বিষয়টা দেখতে হবে। দেশে চালক কম থাকায় অনেক সময় মালিক ও চালক উভয়েই সুযোগ নিয়ে থাকেন। এটা ঠিক নয়। আমাদের দেশে চালকের সংখ্যা বেশি হলে এ অবস্থা তৈরি হতো না।’

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার জন্য মালিক-চালক উভয়ই দায়ী। গাড়িটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। গাড়িটির রুট পারমিট আমরা স্থগিত রেখেছিলাম, তারপরও সেটি চালানো হয়েছে। এটা অন্যায়। আমরা এখন গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেব।’

প্রতি মাসেই ৫০ থেকে ৭০টি বাস দুর্ঘটনা ঘটছে— এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, আনফিট গাড়ি কখনওই রাস্তায় নামাবেন না। এটা মানা মালিকদের দায়িত্ব। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, গাড়ির তেল-মোবিল ঠিক আছে কি না— এসব দেখে গাড়ি চালকদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আবার চালকদেরও দায়িত্ব আছে, এসব বুঝে নিতে হবে। দীর্ঘসময় গাড়ি চালানো যাবে না, বিশ্রাম নিতে হবে। এসব বিষয়ে খেয়াল রাখলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।’