মালয়েশিয়া উপকূলে ইন্দোনেশিয়ান অভিবাসীদের ঢল থামছেই না

ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে মালয়েশিয়ার সমুদ্র উপকূলে ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিছিল যেন থামছেই না। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে সমুদ্র পথে পাড়ি দিতে গিয়ে পানিতেই যেমন সলিল সমাধি হচ্ছে তেমনি প্রতি সপ্তাহে অসংখ্য অভিবাসী দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব সহ চতুর্মাত্রিক সমস্যায় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ন্যায় ইন্দোনেশিয়ার দরিদ্র অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢল উপচে পড়ছে মালয়েশিয়ার উপকূলে।

গতকাল রবিবার এমন একটি দলের ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জোহর প্রদেশের উপকূল থেকে। এ সময় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে, মাসে, বছরে  ইন্দোনেশিয়ান অভিবাসীদের স্রোত অব্যাহত আছে। এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের একটি অংশের সলিল সমাধি হচ্ছে আবার গ্রেপ্তারও হচ্ছে অনেকে। যারা উপকূলে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পারছেন তারা দেশের মূল স্রোতের সাথে মিশে যাচ্ছে।

লকডাউনের আগের চেয়ে লকডাউনের পরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ দেখা যাচ্ছে। এমনকি মালয়েশিয়াতে রোহিঙ্গা স্রোতের চেয়ে ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসীদের স্রোত কয়েক গুণ বেশি।

কয়েক মাস আগে এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় মালয়েশিয়া সরকার সব বাহিনীর স্বমন্বয়ে একটি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে সীমান্তে নজরদারি আরো কঠোর করেছে এবং তাদের গ্রেপ্তার করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সরকার মনে করে এটা জাতীয় হুমকি তাই তাদের যে কোন উপায়ে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।

ভৌগোলিক দিক থেকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার একই সীমান্ত। মাঝখানে সামান্য জলরাশি পাড়ি দিয়েই মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করা যায়, কারণ সমুদ্র পরিবেষ্ঠিত মালয়েশিয়ার সব দিকেই উম্মুক্ত। একই ধর্মীয় সাংস্কৃতিক মেলাবন্ধনের দৃষ্টান্ত এই দুই বন্ধু প্রতিম দেশের  ইতিহাস খুবই পুরনো। বলতে গেলে আজ থেকে ৬৬ বছর আগে মালয়েশিয়া রাষ্ট্রটির জম্মলগ্ন থেকেই।

মালয়েশিয়ায় বৈধ ও অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। তার পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যন্যা স্বল্পোন্নত প্রতিবেশী দেশগুলো। দেশটিতে ঠিক কত পরিমাণ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী বৈধ ও অবৈধ হিসেবে বসবাস করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান তৈরিতে খোদ সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মুল কারণ মালয়েশিয়াতে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা দুই ভাবে অবৈধ হিসেবে প্রবেশ করেছে। একটি হলো আকাশ পথে ও অন্যটি হল সমুদ্র পথে। আকাশ পথে যারা ট্যুরিস্ট ও স্টুডেন্ট সহ অন্যন্যা ভিসা নিয়ে প্রবেশ করে পরে তারা শ্রমিক হিসেবে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে যায়। অন্যদিকে সাগর পথে ট্রলার ও নৌকা নিয়ে অনিবন্ধিত ভাবে কী পরিমাণ অভিবাসী প্রবেশ করেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই।

এদিকে দেশটিতে ইন্দোনেশিয়ান অভিবাসী স্রোতের পাশাপাশি রোহিঙ্গা স্রোত সামলাতে ও সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে একটানা লকডাউনে দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ্য তাদের রয়েছে।

২০১৬ সালে পূনঃ বৈধকরণ প্রক্রিয়াটি ২ বছর চলার পর এখন বন্ধ আছে। দেশটিতে অসংখ্য অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন যারা বিভিন্ন কারনে বৈধ হতে পারেননি। তাদের বৈধতা দেওয়ার দাবি এখনো অব্যাহত আছে। যদিও সরকার এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলেনি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ