মাছের খাবারের দাম দ্বিগুন, বিপাকে রাজশাহীর চাষীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

হঠাৎ বেড়েছে মাছের খাদ্য পণ্যের দাম। গত ছয় মাসে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মাছের খাদ্য পণ্যের দাম। কোনো পণ্যের দাম দুই-তিন গুন পর্যন্ত বেড়েছে। আবার
দুই-তিন গুন দাম দিয়েও সহজে মিলছে না ধান থেকে উৎপাদিত ডিওআরবি এবং রাইসব্র্যান্ড। খাদ্য পণ্যের দাম দুই-তিন গুন বৃদ্ধি পেলেও মাছের দাম সেভাবে না বাড়ায় লোকসানের মুখে পড়ছেন অনেক মাছচাষি।বিশেষ করে বাকিতে খাবার কেনা মধ্যবিত্ত মাছচাষিরা পড়েছেন বেকায়দায়। খাবার কিনে মাছ চাষ করতে যেন হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। ফলে অনেক ব্যবসায়ীই লোকসানের মুখে পড়েছেন মাছ চাষ করতে গিয়ে।

জেলার মৎস্য অধিপ্তর সূত্র মতে, রাজশাহীর দুর্গাপুর, পবা-মোহনপুর ও বাগমারায় সবচেয়ে বেশি পুকুরে মাছ চাষ হয়। এর বাইরে জেলার বাকি ৫টি উপজেলাতেও
কমবেশি মাছ চাষ হয়। সবমিলিয়ে রাজশাহীতে বছরে এখন ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ উৎপাদন হয়। রাজশাহীর চাহিদা পূরণ শেষে এসব মাছের
সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রাজশাহীর তাজা মাছের চাহিদা এখন দেশজুড়ে।
ট্রাকে করে বিশেষ কায়দায় তাজা মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সাম্প্রতিক সময়ে পুকুরে মাছ চাষ করেই সাবলম্বি হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার ব্যবসায়ী। কেউ কেউ হয়েছেন কোটিপতি। সেই দিকে লক্ষ্য করে রাজশাহীতে অবাধে পুকুর খননও হয়েছে প্রশাসন ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ম্যানেজ করে। তবে গত ৬ মাস ধরে মাছের খাদ্য পণ্যের দাম অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ চাষিরা পড়েছেন বিপাকে।

জেলার দুর্গাপুরের মাছ চাষি সাকলাইন হোসেন বলেন, ‘গত ছয় মাসে যে হারে খাবারের দাম বেড়েছে-তাতে মাছ চাষ করায় এখন দায় হয়ে পড়েছে। প্রতি বস্তা ফিডের দাম বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। এই ছয় মাসে প্রতি কেজি ফিডের দাম বেড়েছে অন্তত ৬ টাকা হারে। আাবার গত এক বছরে ফিডের বস্তা প্রতি অন্তত তিন’শ টাকা বেড়েছে। আগে যে খাবারের ২৫ কেজির বস্তার দাম ছিল ৮০০ টাকা, এখন সেখানে হয়েছে ১১শ টাকা। যেটি ছিল ৯০০ টাকা, এখন সেটি ১২০০ টাকায় ঠেকেছে।’

পবার মাছ চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফিডের দাম অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন মাছ চাষি নিজেরা খাবার তৈরী করে খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু সেখানেও দেখা
দিয়েছে নানা সঙ্কট। যে ধান থেকে উৎপাদিত ডিওআরবি এক বছর আগে পাওয়া যেত ১৬ টাকা কেজি দরে, এখন সেখানে দাম বেড়ে হয়েছে ৩৭-৩৮ টাকা কেজি। ছয় মাস আগেও ছিল ২২-২৩ টাকা কেজি। আবার রাইসব্যান্ড ছিল ২২-২৫ টাকা কেজি। এখন সেখানে হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা কেজি। প্রকার ভেদে মাছের সুটকির দাম ছিল ২৫-৬০ টাকা কেজি। এখন সেখানে হয়েছে ৫৫-১০৫ টাকা কেজি। যে ভুট্টা ছিল ৭০০-৮০০ টাকা মণ, এখন সেখানে হয়েছে ১৫-১৬শ টাকা মণ। এভাবে মাছের খাদ্য পণ্যের প্রত্যেকটির দাম বেড়ে দ্বিগুন থেকে তিন গুন হয়েছে। কিন্তু সেই হারে দাম বাড়েনি মাছের। তাতে মাছ চাষ করতে গিয়ে অনেকেই লোকসানের
মুখে পড়েছেন।’

বাগমারার মাছ চাষি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘মাছের খাদ্য পণ্যের এতো দাম বেড়েছে যে কোনো চাষি পুকুরে খাবার দেওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছেন। ফিড কিনে পুকুরে মাছ চাষ করে লোকসান ছাড়া লাভ হচ্ছে না। যারা বাকিতে ফিড কিনছেন, তাদের অবস্থা আরও নাজুক। বস্তা প্রতি দুই-তিনশ টাকা বেশি দিয়ে বাকিতে ফিড কিনতে গিয়ে এসব মাছ চাষিদের কেউ কেউ পথে বসতে চলেছেন। তবে
সাবলম্বি চাষিরা খাবার তৈরী করে মাছ চাষ করছেন বলে এখনো টিকে আছেন।’

রাজশাহীর বিভাগীয় মৎস্য উপপরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, ‘রাজশাহী এখন মাছে উদ্বৃত্ত থাকে। এখানকার মাছ দেশের অনেকটা চাহিদা মেটাচ্ছে। বিদেশেও রপ্তানী
হয় রাজশাহীর মাছ। মাছ চাষ বরে অনেকেই হয়েছেন সাবলম্বি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাছের খাদ্য পণ্যের দাম অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা অনেকটায় বিপাকে পড়েছেন। তবে দ্রুত এই সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

স/আর