মহাবিশ্বে মানুষ ছাড়া কেউ নেই!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি দাবি করেছেন, এই মহাবিশ্বে আর কোথাও বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা নেই। মহাবিশ্বের একাধিক গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একদল মানুষ নানা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাদের আগ্রহে পানি ঢেলে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভবত আমরাই সেই বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে টিকে থাকা সবশেষ জাতি। এই পৃথিবীতে থাকা মানুষের সভ্যতার ইতি ঘটলে মহাশূণ্য প্রকৃত অর্থেই শূণ্য হয়ে যাবে।

ফার্মির হেঁয়ালি অর্থাৎ Fermi Paradox নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এমন ধারণায় পৌঁছান।

ফার্মির হেঁয়ালি হচ্ছে মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকার সম্ভাবনার বিপরীতে এর কোন নিদর্শন না পাবার কিংবা ভিন্ন কোন সভ্যতার সাথে মানুষের যোগাযোগ না হবার হেঁয়ালি।

হেঁয়ালিটি এমন যে, মহাবিশ্বের বয়স এবং এত বিপুল পরিমাণ নক্ষত্রমণ্ডলের মধ্যে পৃথিবীর মতো গ্রহ যদি সাধারণ হয়, তবে বহির্বিশ্বে আরও প্রাণ থাকা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। ইতালির পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি ১৯৫০ সালে একবার কথাচ্ছলে বলেন, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রাণ যদি এতই সহজলভ্য হয় তবে কেন এখনও কোন গ্রহান্তরের মহাকাশযান দেখা যায় নি?

এছাড়া ১৯৭৫ সালে মাইকেল এইচ. হার্ট এর ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। বলেন, মহাকাশ যান দেখা না গেলেও দূর মহাকাশ থেকে কি কোনো রেডিও সংকেতও আমরা পাব না? তারমানে কি আমরা ছাড়া মহাবিশ্বে আর কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী টিকে নেই?

দু’জনের এমন ধ্যান ধারণা থেকে বিষয়টি ফার্মি-হার্ট হেঁয়ালি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এসবের সুত্র ধরে নানা গবেষণাও শুরু হয়।

বরাবরই শক্তিমান দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা ফার্মি হেঁয়ালি সমাধানের নানা চেষ্টা হয়েছে। যা থেকে বরং মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকার সম্ভবনাই জোড়ালো হয়েছে। কিন্তু বিপক্ষে সবচেয়ে বড় যে যুক্তিটি সামনে এসেছে তা হচ্ছে মহাশূন্যের শূন্যতা এখনও বজায় রয়েছে।

এই ধারণার বিপরীতেও অবশ্য যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এভাবে সান্ত্বনা খুঁজেছেন যে, পৃথিবীর বাইরে কোন বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকলেও তা সংখ্যায় খুবই কম! এতই কম যে, মানুষের পক্ষে কখনোই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না।

আর সম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীদের দাবি, শুধু এই ছায়াপথে বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। আর পুরো মহাবিশ্বে শতকরা ৩০ ভাগ।

ফার্মি হেঁয়ালি পরীক্ষা করে গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দ্রেস স্যান্ডবার্গ বলছেন, ভিনগ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে দেখা না হওয়ার একটাই উত্তর হচ্ছে আসলে কোথাও কেউ নেই। অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে আর কোনো বুদ্ধিমান সভ্যতার অস্তিত্বই নেই। কিংবা তারা যোগাযোগের জন্য পৃথিবীর মানুষের মতো বুদ্ধিমান নয়।

তিনি অবশ্য একটি সম্ভাবনার কথাও বলছেন। ড. আন্দ্রেসের মতে, ‘মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী যদি থেকেও থাকে তবে তা খুবই কম হতে পারে। তবে যে সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তা হচ্ছে, তাদের টিকে থাকার সময় শেষ হয়ে গেছে। ভিনগ্রহের কোনো বুদ্ধিমান সভ্যতা যদি টিকেই থাকতো তবে অবশ্যই আমরা যোগাযোগ করতে পারতাম। কিংবা তারাই যোগাযোগ করতো।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ইউকে জানায়, ফার্মি হেঁয়ালি নিয়ে গবেষণায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যান্ডবার্গ ছাড়াও এরিক ড্রেক্সলার এবং টবি অর্ব ছিলেন। তারা বলছেন, ভিনগ্রহীদের দেখা পাওয়া সম্ভবত পৃথিবীর মানুষের আর হবে না।

অবশ্য এলিয়েন বিশ্বাসীরা বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এমন তথ্যে দমে যায়নি। বরং তাদের দাবি, ভিনগ্রহের উন্নত সভ্যতা বহুবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমাদের টিকে থাকার স্বার্থে নানা পরামর্শ ও উন্নত প্রযুক্তি দান করেছে। হারানো সভ্যতার শিলালিপিতেও তা স্পষ্ট বলা হয়েছে। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে শক্তিধর দেশগুলো তা প্রকাশ করেনি।