মহাদেবপুরে এসি আই কারখানার বিষাক্ত পানিতে তলিয়ে গেছে ধান

কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ:
মহাদেবপুরে এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) কারখানার বিষাক্ত পানি ও বর্জ ফেলা হচ্ছে আঞ্চলিক মহাসড়কের ধারের সরকারী সড়ক ও জনপথের নালায়। পানি গুলো নালা ও খাড়ি হয়ে চলতি মৌসুমের বোরো ধানের জমিতে পরছে। ইতোমধ্যেই কারখানার পানিতে প্রায় ৫০ বিঘা সদ্য রোপনকৃত ইরি বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। এছাড়াও আরো ৫ থেকে ৬ শত বিঘা বোরো ধানের ক্ষেত ও বীজতলা সহ বিভিন্ন ফসল চাষ হুমকির মুখে রয়েছে বলে ও দাবী করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। গত আমন মৌসুমে দূষিত পচা পানির কারনে ফসল ফলনে ফলন বিপর্যয় ঘটে ব্যাপক লোকসান হয়েছে এমন অভিযোগ কৃষকদের।

বিষাক্ত বর্জ ও পচা পানি থেকে আবাদী জমির ফসল রক্ষা করতে ইতোমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক অফিস বরাবর গন স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। নওগাঁ-মহাদেবপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সরস্বতীপুর নামক স্থানে এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) নামে কারখানাটির বিরুদ্ধে এলাকার কৃষকদের অভিযোগ যাচাই করার জন্য প্রতিবেদক সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানাটির বাইরেই পাকা সড়কের ধারের সরকারী সড়ক ও জনপথের নালায় কালো রংয়ের পানি ছেড়ে দেয়ার দৃশ্য দেখতে পায় । ছেড়ে দেয়া পানি নালা হয়ে পাশ্ববর্তী তালতলি ব্রীজ (খাড়িতে) পড়ার পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরছে মাঠের পর মাঠের আবাদি কৃষি জমিতে।

সরজমিনে দেখা গেছে খাড়ির নিচু এলাকা খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের মাঠে  গিয়ে পানির নিচে তলিয়ে থাকা সদ্য রোপনকৃত বোরো ধানের ক্ষেত ও বীজতলা দেখান দেখা যায়। এসময় কয়েকজন কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিচু মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিঘার পর বিঘা সদ্য রোপনকৃত বোরো ধান ও বীজতলা কালো, লাল রংয়ের ফেনাও দূর্ঘন্ধ যুক্ত  পানিতে তলিয়ে আছে।

খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের কৃষক আঃ সামাদ (৫৫) জানান, আমি এখানে ৬বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করেছি যা বর্তমানে ঐ কারখানাটির ছেরে দেয়া পচা পানিতে তলিয়ে আছে। শুধু আঃ সামাদের নয় ঐ গ্রামের কৃষক আসলাম আলীর ৪ বিঘা, আবু বক্কর সিদ্দিক এর ৫ বিঘা, হাসেন আলীর ৫ বিঘা, রিপন মন্ডলের ৩ বিঘা, মজ্জিম হোসেনের ৩ বিঘা, আমজাদ আলীর ৫ বিঘা, নাহিদ হোসেনের ৪বিঘা, আজিবরের ২ বিঘা ও আঃ মজিদের ৪ বিঘা জমি সহ পালপাড়া ও সোনাপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষকের  সদ্য রোপনকৃত আমন ধানের ক্ষেত ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ ঐ সব কৃষকরা জানিয়েছেন।

কৃষক আঃ সামাদ, আসলাম আলী, হামিদুল ও আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, তালতলি ব্রীজের নিচে খাড়িতে বাঁধ দিয়ে রাখার কারনে সেখানে প্রচুর পরিমান পানি জমাট হয়ে আছে যে কোন সময় এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি আসলেই আরো শতশত বিঘা জমির ক্ষেত তলিয়ে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ও পরিবেশ অধিদপ্তর, বগুড়া আঞ্চলিক অফিসেও লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।

এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) এর এডমিন রেজাউল করিম সেলফোনে প্রতিবেদককে জানান, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে সরকারী নিয়ম মোতাবেক কারখানাটি পরিচালনা করছি, আর যে পানি টুকু বাইরে যাচ্ছে সে পানি দূর্ষন মুক্ত করার পরই বাইরে ছাড়া হচ্ছে। কার পানিতে কার জমির ধান নষ্ট হচ্ছে সে বিষয়ে আমার জানানেই বলে এবিষয়ে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজী নেই বলেও জানিয়েছেন।
স/শ