মশা মারতে কামান কই?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীতে মশার দাপুটে রাজত্বের রাশ টানতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশন। গত বছর মশার প্রজনন মৌসুমের শুরুতে নিধন কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। এবার যথাসময়ে শুরু হলেও মশাকে বাগে আনা যাচ্ছে না। উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা এর জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দুষছেন। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দাবি, তাদের এলাকায় মশা কম। কিন্তু নাগরিকেরা বলছেন, তাঁরা মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ।

মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের। কিন্তু গত বছর মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া ‘মহামারি’ আকারে ছড়িয়ে পড়লে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন ডিএনসিসির কাউন্সিলররা। পরে ওই বছরের ২২ জুন কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার ডিএনসিসি ১২ ফেব্রুয়ারি থেকেই মশক নিধনের বিশেষ কর্মসূচি শুরু করে দেয়।

ডিএসসিসির মশক নিধন কর্মসূচি শুরু করে গত বুধবার। মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে থাকলেও মাঠপর্যায়ে তা তদারকের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাউন্সিলরদের। কিন্তু সেখানেও অবস্থার উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।

নগর বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম বলেন, মশা এখন ঢাকার মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতবার মেয়ররা এর গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার যেন আগের অবস্থার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের হাতেই থাকতে হবে। তবে অর্পিত দায়িত্ব তাঁরা ঠিকঠাক পালন করছেন কি না, সেটা দেখার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কাউন্সিলরদের অবহেলার কারণে মশক নিধন কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। গত বছর এই কর্মকর্তাদের দিকে আঙুল তুলে একই কথা বলেছিলেন কাউন্সিলররা।

মশা নিয়ন্ত্রণে দুভাবে কীটনাশক ছিটানো হয়। মশার লার্ভা মারতে সকালে তরল ওষুধ এবং উড়ন্ত মশা মারতে বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়।

কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দেখতে গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসির চারটি ওয়ার্ডে যায় প্রথম আলো। লার্ভা মারতে সকাল সাড়ে সাতটায় ওষুধ ছিটানো শুরু করার কথা। সকাল সোয়া আটটার দিকে মিরপুর ১ নম্বরে ডিএনসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয় তালাবদ্ধ। আশপাশের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্যালয়ে ১০টার আগে কেউ আসেন না।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতান বলেন, কার্যালয়ে মশার ওষুধ রাখা হয় না। ওয়ার্ডের কমিউনিটি সেন্টারে রেখে সেখান থেকে মশক নিধনকর্মীদের ওষুধ বিতরণ করা হয়। তাঁর দাবি, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ভালো চলছে।

সকাল আটটার দিকে ডিএনসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সাতজন মশক নিধনকর্মী উপস্থিত। কিন্তু তখনো কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা আসেননি।

সকাল সাড়ে সাতটায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। আটটার পর পাশের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, নয়জন মশক নিধনকর্মীর মধ্যে মাত্র তিনজন উপস্থিত হয়েছেন। ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব কিংবা কাউন্সিলর-কেউই নেই।

ডিএনসিসির মশক নিয়ন্ত্রণসম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিন্নাত আলী মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে অবহেলার অভিযোগ স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘কিছু অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হাসান বলেন, মশার ওষুধ কোন কোন জায়গায় ছিটানো হবে, সে ব্যাপারে একটা কেন্দ্রীয় কর্মপরিকল্পনা থাকলেও বেশির ভাগ কাউন্সিলর সেটি মানছেন না। ওষুধগুলো কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিবদের জিম্মায় থাকে। তাঁরাও ঠিক সময়ে দপ্তরে আসেন না। বিষয়টিকে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে পরবর্তী বোর্ড সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

দক্ষিণের চিত্র
বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এবং আজিমপুর সরকারি কলোনি এলাকায় দেখা যায়, মশক নিধনকর্মীরা ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দিচ্ছেন।
আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রব বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বিকেলে ধোঁয়া দিতে দেখা যায়। কিন্তু ওষুধ দেওয়ার পরও মশা কমার কোনো লক্ষণ নেই।’

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, ডিএসসিসি তথা পুরান ঢাকায় মশার উপদ্রব কম। গত বছর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সক্রিয়ভাবে মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আমার অফিসের সামনে দুই দিন আগেও জমে থাকা পানিতে প্রচুর মশা দেখেছি। এই এলাকায় মশার উৎপাত বন্ধ হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।’

প্রথম আলো