প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ আমাদের পরিবারটি-শংকর চৌধুরীর মেয়ে জলি চৌধুরী

শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। নাটোরের এক অবিসংবাদিত নেতার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় যার প্রত্যেক্ষ এবং পরোক্ষ অবদানে স্বাধীন হয় এদেশ। এবারের স্বাধীনতা সম্মাননায় সে বীর পুরুষ, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ শংকর গোবিন্দ চৌধুরীকে দেয়া হচ্ছে মরনোত্ত্বর সম্মাননা। মৃত্যুর দীর্ঘ ২৩ বছর পর স্বাধীনতা সম্মাননায় ভূষিত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার পরিবারটি। শংকর গোবিন্দ চৌধুরির মেয়ে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বাবার স্মৃতি চারণ করে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সিল্কসিটি নিউজের কাছে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সিল্কসিটি নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুব হোসেন।

সিল্কসিটি নিউজ: মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের কারনে আপনার বাবা প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্বাধীনতা পুরুস্কার পাওয়ায় সিল্কসিটি নিউজের পক্ষ থেকে আপনার পরিবারকে জানাই অভিনন্দন।

উমা চৌধুরি জলি: হ্যাঁ, আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবাকে এবার বর্তমান সরকার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনিত করেছেন। যেটা পত্রিকার পাতায় দেখার পর কি যে আনন্দ লেগেছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তবে আরো বেশি খুশি হতাম, যদি বাবা বেঁচে থাকতে দেখে যেতেন এই পুরুস্কার ।

সিল্কসিটি নিউজ: বাবার পুরুস্কার প্রাপ্তিতে আপনাদের অনুভুতি কেমন?

উমা চৌধুরি জলি: প্রথমে যখন দু-একজন ফোনে আমার বাবা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় দেশের সবোর্চ্চ সম্মান পেতে যাচ্ছেন, এমনটি যখন সবাই বলছিল, তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে যখন বিভিন্ন অনলাইন এবং পত্রিকায় আমার বাবার নাম ছাপা হয়, তখন মনে একটু প্রশান্তি আসে। তবে বাবার মৃত্যুর ২৩বছর পর হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিবারের প্রতি যে সম্মান দেখিয়েছেন, আমরা শংকর চৌধুরির মেয়ে হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ। কখনও প্রধানমন্ত্রীর এই অবদান আমরা ভুলতে পারবো না। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি জানাই।

সিল্কসিটি নিউজ: আপনার বাবা জমিদার পুত্র হওয়ার পরও তার জীবন যাপন কেমন ছিল?

উমা চৌধুরি জলি: আমার বাবা জমিদার পুত্র হওয়ার পরও তিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপন করে গেছে। তিনি কখনও নিজের জন্য কিছু করেননি। তার ধ্যান-জ্ঞানে সব সময় ছিল রাজনীতি আর বঙ্গবন্ধু। জীবনদ্দশায় যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট কর্মী এবং বঙ্গবন্ধুর আর্দশের অনুপ্রানিত ছিলেন।

সিল্কসিটি নিউজ: এই বিশেষ মুহুর্তে বাবার কোন স্মৃতির কথা মনে পড়ে কিনা ?

উমা চৌধুরি জলি: বাবজির তো অনেক স্মৃতির কথাই মনে পড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যখন তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল, তখন তাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, তার শেষ ইচ্ছা কি, তখন তিনি চিরকুটে লেখে গেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তিনি দেখে যেতে পারলেন না। সেই চিরকুটটা পরে হানিফ ভাইয়ের কাছে ছিল।

শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে উমা চৌধুরীর সাথে সিল্কসিটি নিউজের প্রতিবেদক মাহবুব হোসেন

সিল্কসিটি নিউজ: ১৫ আগষ্ট সম্পর্কে কিছু বলবেন?

উমা চৌধুরি জলি: হ্যাঁ ১৫ আগস্ট সারা দেশের মতো আমাদের পরিবারেও ছিল এক শোকাহত দিন। এই দিন আমাদের পরিবারে কোন রান্না হতো না। বাবা সহ আমাদের পরিবারের সবাইকে উপোস থাকতো। সকালে উঠেই বাবা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। দিন শেষে সন্ধ্যায় আমরা সবাই উপোস ভাঙতাম।

সিল্কসিটি নিউজ: আমরা যতদুর জেনেছি মৃত্যু শয্যায় তার শেষ ইচ্ছা ছিল নাকি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার দেখে মরতে চেয়ে ছিলেন,কতটুকু সত্যি?

উমা চৌধুরি জলি: আমার বাবা বঙ্গবন্ধুকে এতটা ভালবাসতেন যেটা বলার মতো ছিলনা। তার জীবনের শেষ ইচ্ছাই ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার দেখে তিনি মরতে চাইতেন। এমনকি যে দিন শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করবেন সেদিনও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তার জীবনের শেষ ইচ্ছা কি, সেদিনও তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে গেছেন। এমনকি তাঁর ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না দেখে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন না। কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা টুকু আর পুরণ হয়নি।

সিল্কসিটি নিউজ: রাজনীতি থেকে আপনার প্রাপ্তি কী?

উমা চৌধুরি জলি:  মানুষের ভালোবাসা। গর্ব হয় এই ভেবে যে আমি শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে, যাকে শুধু বাবার মেয়ে বলেই ভালোবাসে। লোকজন আমার কাছে আসে সুখ দুখের কথা বলে, মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে। এটা কম কি আর কয়জনের ভাগ্যে জোটে?

সিল্কসিটি নিউজ: পরিশেষে আবারো আপনাদের অভিনন্দন জানাই।

উমা চৌধুরি জলি: আপনাদের কেও ধন্যবাদ জানাই। পরিশেষে আমার বাবা এবং পরিবারের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সিল্কসিটি নিউজকে ধন্যবাদ।

 

 

বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা স্বর্গীয় বাবু সংকর গোবিন্দ চৌধুরী

শংকর চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন ও সামাজিক কর্মকান্ড:

ছাত্র জীবন থেকে বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন । ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করায় এক বছর কারাবাস করতে হয় তাকে। ১৯৫৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৭০ সনের নির্বাচনে এমপিএ নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দুইবার নাটোর পৌর সভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সনে নাটোর জেলার গভর্ণর নিযুক্ত হন। তিনি আমৃত্যু নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৬ সালে ছয়দফা; ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন; ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের জাতির পিতার স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ড পরের আন্দোলন এবং ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি জনগণকে সাথে নিয়ে সামনের সারিতে থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কোনো প্রলোভন বা হুমকি তাঁকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলাপকালে নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা স্বর্গীয় বাবু সংকর গোবিন্দ চৌধুরী

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন শংকর চৌধুরি:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে ৭নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২৭ নভেম্বর ১৯৭০ সালের পরপরই দেশপ্রেমিক নাটোরবাসী বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। ৭ই ডিসেম্বর ১৯৭০ এমপিএ ও ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭০-এ এমএলএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় দেশের অন্যান্য স্থানের জনগণের মত নাটোরের জনসাধারণের মধ্যেও তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে মিছিল, আন্দোলন ও প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশ ফেব্রুয়ারী/১৯৭০ এর প্রথম দিকেই শুরু হয়েছিল। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণ নাটোরের জনগণের মাঝেও গণজাগরনের সৃষ্টি করেছিল এবং তা ক্রমে ক্রমে তীব্র হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ই মার্চ থেকে নাটোরে তাঁর নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

স/শ