মন নয় শুধু, পৌরুষও চায় নারী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মেঘ সরে গেলে আবার ঝিলিক দেয় সূর্য। জীবন একটা আয়না। যতটুকু সেখানে প্রতিফলিত হয়, ততটুকুই দেখতে পাওয়া যায়।

আরও অনেক উদ্বুদ্ধ করা সিনেমা ও বইয়ের মতো এই ছোটগল্পটিও কাল্পনিক। কিন্তু কল্পনাও তো মাঝে মাঝে ঘোর বাস্তব!

বস্তাপচা ছকে বাঁধা মনে হতে পারে। কিন্তু গল্পটা একেবারেই সত্যি। একটি গরিব ছেলে প্রেমে পড়ল বড়লোকের কন্যের।

তার পর তো সে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেল মেয়েটির বাবার কাছে। তিনি একেবারে ফিল্মি বাবার কায়দায় উত্তর দিলেন, ‘‘তোমার যা রোজগার বাপু, তা আমার ড্রাইভারের মাইনের সমান। তোমার সঙ্গে কেন আমার মেয়ের বিয়ে দেব?’’ ধীরে ধীরে সুর চড়ান তিনি, ‘‘কী করে তুমি ভাবলে এমনটা হতে পারে! নিজের স্তরের কাউকে খুঁজে নাও না।’’

গল্পটা
এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হল না। দিন যায়। মেয়েটিকে ভুলতে পারেনি ছেলেটি। মাঝে চলে গিয়েছে দশটা বছর। হঠাৎ দু’জনের দেখা এক শপিং মলে। মেয়েটি বলল, ‘‘কী গো! কেমন আছ বলো। আমার বিয়ে হয়েছে জানো তো! আমার স্বামীর রোজগার কত বলো তো? মাসে ৯০,০০০ টাকা। পারবে কোনওদিন ওকে হারাতে? ও কিন্তু খুব স্মার্টও।’’ মেয়েটির গলায় অবিকল ওর বাবার সুর।

দ্রুত জলে ভরে আসে ছেলেটির চোখ। যে মেয়েটিকে ভালবেসে জীবন বদলে গেল, তার মুখ থেকে এমন সব কথা শুনতে শুনতে বুকের মধ্যে এক আশ্চর্য অনুভূতি রিনরিন করে বেজে যাচ্ছিল।

এই বিষয়ে অন্যান্য খবর

আচমকাই সেখানে হাজির হল মেয়েটির স্বামী। মেয়েটি কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সে কিছু বলার আগেই, তার স্বামী ছেলেটিকে বলল, ‘‘স্যার, আপনি এখানে! আমার স্ত্রীকে আপনি চেনেন নাকি!’’ তার পর স্ত্রী’র দিকে পাশ ফিরে বলল, ‘‘ইনি একজন নামকরা শিল্পী। নিউ ইয়র্কে থাকেন। জানো তো, উনি একটি মেয়েকে ভালবেসেছিলেন। কিন্তু তার হৃদয় জয় করা আর হয়ে ওঠেনি। আর তাই উনি বিয়েও করেননি। ভাবো তো, যদি ওই মেয়েটি ওঁকে বিয়ে করত কত সুখী হত!’’

মেয়েটি ভিতরে ভিতরে কেঁপে ওঠে। সে কোনও কথা বলে উঠতে পারে না।

দু’জন দু’জনের প্রেমে মগ্ন হয়ে বিয়ে করে। কিন্তু টাকাপয়সা দেখে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত একেবারেই অনুচিত! এই গল্প আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় এই চিরন্তন সত্যের সামনে।

কেন বহু ভাল মানুষ আজও প্রত্যাখ্যাত হন মেয়েদের দ্বারা? মেয়েরা কি চায় খারাপ মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে! নিশ্চয়ই তারা তা চায় না। এখানে রইল বেশ কিছু কারণ।

১. অনেক ছেলেই মেয়েদের কাছে ‘ভাল’ মানুষ হয়ে উঠতে চায়। নিজের ভালমানুষি দিয়েই ইমপ্রেস করতে চায় পছন্দের মেয়েটিকে। বিপদের সময়ে পাশে থাকতে চায়। তার সত্যিকারের বন্ধু হয়ে ওঠাই তার লক্ষ্য। কিন্তু তার কাছে নিজের ‘শরীরী’ ইমেজ কী হবে, সেটা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা থাকে না। অথচ নিজের শরীরী ভাষা, চকিত স্পর্শ আর কথার তোড়ে সেই জায়গাটা অনায়াসেই তৈরি করা যায়।

২. উনবিংশ শতাব্দী বা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপে একটা প্রথা ছিল। বিয়ের আগে যুবক-যুবতীরা বাইরে ‘ডেট’ করতে যেত। সঙ্গে পাহারাদার হিসেবে থাকতেন একজন আত্মীয় বা পারিবারিক বন্ধু। আসলে তিনি খেয়াল রাখতেন, যেন ছেলেমেয়েরা নিজেদের ‘স্পর্শ’ করতে না পারে। এর পর সেই আলাপের রেশ ধরে যদি পরস্পরকে পছন্দ হয়ে যেত তাদের, তাহলে ছেলেটি মেয়েটির বাবার কাছে যেত বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। এর পর বিয়ের রাতে তাদের হাতেখড়ি হত শরীরী খেলায়। কিন্তু এখন আর দিন তেমন নেই। আজকাল অনেক মেয়েই চায়, সম্পর্কের শুরুতেই শরীরী অভিজ্ঞতা পেতে। ডিভোর্সের হার দিনে দিনে বাড়ছে। তাই এখনকার মেয়েরা অনেক বেশি সচেতন, তার সঙ্গীর ব্যাপারে। পছন্দের পুরুষটির সঙ্গে বিয়ে পর্যন্ত যাওয়া যাবে, নাকি কেবল বয়ফ্রেন্ড হিসেবেই ঠিক আছে, সেটাও ভাবতে হয়। আর সেই ভাবনায় জড়িয়ে থাকে পুরুষ সঙ্গীর যৌন পারঙ্গমতার ব্যাপারটিও। আসলে বিয়ের আগে যৌনতার বিষয়টি আজকাল আর কোনও ট্যাবু নয়, এমনকী মেয়েদের ক্ষেত্রেও। একাধিক পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে যোগ্য পুরুষটিকে বেছে নেওয়াটা তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
৩. পছন্দের নারীর কাছে নিজেকে ‘মার্জিত ও ভদ্র’ হিসেবে পেশ করাটা মোটেই খারাপ ব্যাপার নয়। নিজের ইমেজটা ‘ব্যাড বয়’ মার্কা করে তুললেই মেয়েরা দলে দলে ছুটে আসবে, সেটা ভাবা মোটেই ঠিক নয়। ভাল ছেলেরা বিবাহিত জীবনে সুখী হয়। কিন্তু নিজের এই ভালমানুষিকেই কেবল মাত্র কাজে লাগিয়ে মেয়েদের কাছে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে চাওয়াটা ঠিক নয়। নিজেকে ভাল মানুষ করে তুললেই মেয়েটি তাকে ‘শরীর’ উপহার দেবে, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। বরং খুব বেশি ভালমানুষি দেখালে মেয়েটির কাছে সে উঠতে পারে ভ্রাতৃপ্রতিম। কাজেই বেশি ভান না করে খোলামেলা কথাবার্তাতেই আলাপ গড়ে তোলা কাম্য। যেন মেয়েটি আপনার সঙ্গে কথা বলার সময়ে নিজের বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে কথা বলার অনুভূতি পায়। আপনি ১৮ হোন বা ৫৮, এই নিয়ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

৪. অনেকেই চায় মেয়েটির বিশ্বাসভাজন হয়ে তার বন্ধু হয়ে উঠতে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব যত গাঢ় হয়ে উঠতে থাকে, তত মেয়েটির তার প্রতি বিশ্বাস বেড়ে উঠবে। এবং সে তার প্রেমে পড়ে যাবে। এই থিওরি অনেকেই মেনে চলতে চায়। ভাবে, মেয়েটি যদি অনুভব করে, ছেলেটি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য, এর সঙ্গে সারা জীবন থাকা যায়, তা হলেই সে বিযের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু এই ভাবনা জন্ম দিতে পারে উলটপুরাণের। মেযেটি ভেবে বসতে পারে, ছেলেটি বিশ্বাসযোগ্যতার ফাঁদ পেতে তার মন জয় করতে চাইছে। কাজেই এই পদ্ধতি মোটেই খুব একটা কার্যকরী নয়।

৫. নিজেকে জাহির করতে চাওয়াটাও আরেকটা ভুল সিদ্ধান্ত। ধরা যাক, একটি ছেলে সে দারুণ চাকরি করে, কেতাদুরস্ত পোশাক পরে, ঝাঁ চকচকে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু দেখা গেল, একটি মেযের সঙ্গে ডেটে বেরিয়ে সে নিজেকে সেই আর্থ-সামাজিক অবস্থানের চেয়েও উঁচুতে তুলে ধরতে চায়। মেযেটি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারবে, নিজের প্রকৃত অবস্থানে রং চড়িয়ে মিথ্যের বেসাতি গড়ে তুলছে এই ছেলেটি। ইমপ্রেস হওয়া তো দূর, উল্টে সে বিরক্ত হয়ে যেতে পারে।

৬. সঠিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করাটা জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত অপেক্ষা করাটাও বিপজ্জনক হতে পারে। মেয়েটি কখন সংকেত দিচ্ছে, সেটা বুঝে নিতে হবে। বিভিন্ন মেয়ের ক্ষেত্রে এই সংকেতের চেহারা একেক রকম। ধরা যাক, একটি মেয়ে, সুন্দরী এবং আত্মবিশ্বাসী, সে কিন্তু খুব সহজবোধ্য সংকেত দেবে না। সে আসলে বুঝে নিতে চাইবে পুরুষ সঙ্গীর মানসিক কাঠিন্যের দিকটা। যদি কোনও ভাবে সে বুঝতে পেরে যায়, ছেলেটি মোটেই খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নয়, সে তখনই তাকে প্রত্যাখ্যান করে দেবে।

৭. একটি মেয়ের সামনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলাটাও খুব খারাপ ব্যাপার। মেয়েরা ছেলেদের আত্মবিশ্বাসের ভিতর যৌন গন্ধ পায়। পাশাপাশি, ছেলেটির নার্ভাসনেস, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি থেকে জন্ম নেয় ছেলেটির প্রতি বিকর্ষণ। কাজেই আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা ঠিক রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্বাস আর অবিশ্বাস সর্বদাই কিন্তু আপেক্ষিক। কোনও পূর্বনির্ধারিত ছকে তা কাজ করে না। এই সত্য মনে রেখেই এগোন বা পিছিয়ে আসুন।