ভোলাহাট মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরুণ কুমার পালের বিরুদ্ধে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাৎ, প্রকল্পের নামে হরিলুট, ভুয়া ভাউচারে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, নারী প্রশিক্ষনার্থীদের শ্লীলতাহানিরও।
অভিযুক্ত বরুণ কুমার পাল জেলার গোমস্তাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করছেন ভোলাহাট উপজেলায়।
সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ভোলাহাটে অফিস করেন বরুণ কুমার পাল। বাকি কর্মদিবস তার হয়ে অফিস সামলান সেখানকার অফিস সহকারী আঞ্জুমান আরা। এই দুজনই নির্বিঘ্নে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগী এনিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ভোলাহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন বরাবর। বিষয়টি নিশ্চিত করে চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন বলেন, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ পাঠানো হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। তিনিই তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেবেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নারী প্রশিক্ষনার্থীদের দৈনিক একশ’ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা দেয়ার কথা। কিন্তু অনেকেই এই অর্থ পান না। কেউ কেউ পান নামমাত্র। কিন্তু এনিয়ে মুখ খোলার সুযোগ নেই। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হেনস্তা করেন অফিস প্রধান বরুণ কুমার পাল ও অফিস সহকারী আঞ্জুমান আরা। সুযোগ দেয়ার নাম করে বরুণ কুমার পাল নারী প্রশিক্ষনার্থীদের উপর যৌন নিপীড়ন চালান। তার যৌন হেনস্তা থেকে রক্ষা পাননি এই দপ্তরের নারী কর্মীরাও। এসব কিছু জেনেও অফিস সহকারী আঞ্জুমান আরা মুখ বন্ধ রাখেন। উল্টো তিনিও নারী প্রশিক্ষণার্থীদের তার নিজের বাসায় কাজ করিয়ে নেন।

প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, অভিনব কায়দায় প্রশিক্ষণার্থীদের নামে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাত করে আসছেন অফিস প্রধান ও অফিস সহকারী। তারা প্রশিক্ষণার্থীদের হাজিরায় দুটি খাতা চালু করেছেন। একটি খাতা প্রশিক্ষকের কাছে থাকলেও অন্যটি থাকে প্রধান সহকারীর কাছে। কোন প্রশিক্ষনার্থী অনুপস্থিত থাকলে প্রশিক্ষকের খাতায় হাজিরা থাকে না। কিন্তু অফিস সহকারীর কাছে থাকা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় ঠিকই। পরে ওই প্রশিক্ষনার্থীর নামে প্রশিক্ষণ ভাতা উত্তোলন হয়। পরে যোগসাজসে অফিস প্রধান ও অফিস সহকারী এই অর্থ আত্মসাত করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দুটি হাজিরা খাতা পাওয়া যায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে। প্রশিক্ষক বেবী খাতুনের কাছে থাকা হাজিরা খাতায় দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত জলি খাতুন নামের এক প্রশিক্ষণার্থী। অথচ অফিস সহকারী তাকে বরাবরই হাজির দেখিয়েছেন। তার প্রশিক্ষণ ভাতা উত্তোলন সিটেও সাক্ষর করেছেন প্রশিক্ষক।

জানতে চাইলে প্রশিক্ষক বেবী খাতুন বলেন, তিনি জলি খাতুনকে কখনো প্রশিক্ষণে আসতে দেখননি। তিনি তাকে চেনেনও না। তবে প্রশিক্ষণ ভাতা উত্তোলন সিটে অফিস সহকারী আঞ্জুমান আরার নির্দেশে তিনি সাক্ষর করেছেন। যোগাযোগ করা হলে এনিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি অফিস সহকারী।

কেবল প্রশিক্ষনার্থী নন, খোদ নিজ দপ্তরের আয়ার নামে বরাদ্দ ১২ মাসের বেতনের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন অফিস প্রধান ও অফিস সহকারী। দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে ওই নারী কর্মী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই কর্মীর বেতন পরিশোধে বাধ্য করেন আঞ্জুমান আরাকে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারী কর্মীকে নানান ভাবে হয়রানি করছেন অফিস সহকারী। তাকে মামলায় জড়ানোরও হুমকি দিচ্ছেন। এই অফিযোগসহ তার তার বিরুদ্ধে ওঠা অন্য অভিযোগও অস্বীকার করেন আঞ্জুমান আরা।
এছাড়া কর্মীদের তিন মাসের বেতন ও বোনাসের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অফিস প্রধান ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অফিসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙ্গাতে বাধা দেয়ারও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানতে চাইলে সহজ স্বীকারোক্তি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরুণ কুমার পালের। তিনি বলেন, কিছুটা হলেও এখানে অনিয়ম হয়েছে। এনিয়ে নিজের দায়ও স্বীকার করে নেন এই কর্মকর্তা।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীন বলেন, অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/শা