ভুল স্বীকার করে মুজিববর্ষ পালন করুন: বিএনপিকে ১৪ দল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।

তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের যথাযথ সম্মান দিয়েছেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাই মুজিববর্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি সব অপশক্তিকে পরাজিত করতে পারি তাহলেই এ বর্ষ পালন সার্থক হবে।

রোববার বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তারা একথা বলেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১৪ দল সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু মৃত্যু রোধে আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হন, সেই দেশে নারী-শিশু নির্যাতন চলতে পারে না। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। তারা সব অর্জন নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে। নারী-শিশু নির্যাতন একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু এটা সামাজিক অবক্ষয়, তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে এ অপশক্তিকে নির্মূল করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা অবশ্যই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে আসবেন। কোনো শক্তি তাদের আসা রুখতে পারবে না। দিল্লির দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট জঙ্গি দমন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের সৃষ্ট অন্ধকারের বাংলাদেশ এখন আলোকিত। এদেশে নারী-শিশু নির্যাতনকারী পশু শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরাস্ত করতে হবে।

মুজিববর্ষের কর্মসূচি ঘোষণা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হবে। মোমবাতি হাতে শোভাযাত্রা সহকারে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এ কর্মসূচি একযোগে দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বস্তরের মানুষের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ভুল স্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করুন। তাহলে হয়তো জাতি আপনাদের ক্ষমা করতে পারে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, নারী নির্যাতন করে কেউ পার পাবে না। নুসরাতের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। দলীয় লোকও নিস্তার পায়নি কেউ। এটা শেখ হাসিনার সরকার। সেজন্য এ মার্চে নারীদের জন্য লড়াই, সংগ্রাম, অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। নারীদের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তার নাম (শেখ হাসিনা) স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দু-একটা বখাটের কাজ নয়। দু-একটা বখাটে ধ্বংস করে এ নির্যাতন সমস্যার সমাধান হবে না। নির্যাতনের এসব ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ জড়িয়ে আছে।’

ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হল দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যখন শীর্ষে রয়েছে, তখন নারী, সাধারণ মানুষ, গার্মেন্ট শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমাদের শিশুরাও এ ধরনের অপকর্মের শিকার হচ্ছে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, কামরুল ইসলাম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নেতা রফিকুল আলম, সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী, নারী নেত্রী হাজেরা সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিম চন্দ্র ভৌমিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের আগে মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে নেতারা শিখা চিরন্তনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।