ভুক্তভোগীকে হলে তুলতে গিয়ে অবরুদ্ধ ছাত্র উপদেষ্টা, তিন ঘণ্টা পর উদ্ধার


রাবি প্রতিনিধি :
মানসিক নির্যাতনের শিকার ছাত্রীকে আবাসিক হলে তুলে দিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর। আজ বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যায়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হল গেটের ছিটকিনি লাগিয়ে অবস্থান নেন বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে ছাত্র উপদেষ্টা ও হলে থাকা পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অবরুদ্ধ হয়ে পরেন। পরে তিন ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করেন।

সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর এ ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ছাত্র উপদেষ্টার হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তাদের বিভাগের সভাপতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলে কাজী সুমাইয়া আক্তার নামের ছাত্রীকে হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি বালা ও সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ দুপুর একটায় ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসেন। পরে দেড়টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে হলে নিয়ে যান।

এদিকে গতকাল রাতেই ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয় ও সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী দোলনকে রুম পরিবর্তন করতে হল প্রাধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে আজ দুপুরে বঙ্গমাতা হলে যান সঙ্গীত বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক শায়লা তাসমিন। এসময় তাঁর সাথে ছাত্র উপদেষ্টার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে যান শায়লা তাসমিন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা হল গেইটে উপস্থিত হন। তাদের শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা হল গেট অবরুদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গেলে বিশ^বিদ্যালয়ে কর্মরত দুজন সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তারা।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। তাদের বিভাগের শিক্ষার্থীকে সিটে তুলে দিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়েছেন তাই তারা ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করতে এসেছেন বলে জানান তারা।

পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ বেশ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধারের জন্য হলের ভেতরে যেতে চাইলে সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বাঁধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পরে ছাত্র উপদেষ্টাকে নিয়ে বের হলে সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদেরকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তখন জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘তোমাদের কত বড় সাহস আমাদের ওপর হামলা করতে আসো।’ এসময় সহকারী প্রক্টরেরা শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করেন তারা।

এদিকে এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ক্যাম্পাসে কর্তব্যরত সাংবাদিকেরা। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ধারণ করতে গেলে তাদেরকে বাধা প্রদান করেন তারা। এসময় সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তারা। এর আগে হলে প্রবেশ করতে গেলে দুই সাংবাদিককে ধাক্কা দিয়ে হল থেকে বের করে দেন তারা। সাংবাদিকেরা তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

ছাত্র উপদেষ্টার সাথে কি হয়েছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে সঙ্গীত বিভাগের সভাপতি শায়লা তাসমিন বলেন, আমি যখন জানতে পারি আমার বিভাগের শিক্ষার্থী দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে তখন আমি বঙ্গমাতা হলে যাই। সেখানে ছাত্র উপদেষ্টা আমাকে বলেন, ‘আপনি এখানে আসতে পারেন না। আপনাকে কেউ ডাকেনি। হু আর ইউ?’ তিনি এভাবে আমাকে অপমান করে আমাকে বের করে দেন। এতে অপমানিত হয়ে আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।

ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিশ^বিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার জায়গা। এটি কোনো নির্যাতন ও অত্যাচার করার জায়গা নয়। এখানে শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এমন আচরণ শেখানো হয় না। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনারও তদন্তও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে।