ভাষণটি ছিল সুদূরপ্রসারী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

৭ মার্চ বাঙালির  ইতিহাসে অনন্যসাধারণ একটি অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে বা বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সংক্ষিপ্ততম ভাষণ হলেও এটি ছিল শ্রেষ্ঠতম ভাষণ। এবং বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিল এই ভাষণ।

 

এই ভাষণের প্রথম অংশে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য চারটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছিল।

তবে এই ভাষণের দ্বিতীয় অংশটা ছিল বাঙালির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় অংশে খোলামেলা একটি সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এবং শুধু সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, মুক্তির কথাও বলা হয়েছিল এবং সেটা যে গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধ হবে, তা-ও নির্দেশিত হয়েছিল। বাঙালিকে মানসিকভাবে বা অন্য পদ্ধতিতে প্রস্তুত হওয়ার জন্যও একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় অংশে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

আমরা যাঁরা সেই ভাষণটি শুনেছিলাম, আমাদের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না যে আগামীতে আমাদের কী করণীয়। তাঁর নির্দেশ আছে কি নেই, সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ  নেই। অর্থাৎ আমরা আমাদের নির্দেশটি পেয়ে গিয়েছিলাম।

এখন প্রশ্ন ওঠে যে তিনি কেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। সেটি সম্ভব ছিল না। সেটি অবাস্তব হতো, ওই পরিস্থিতিতে। এর কারণ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা উচ্চারণ হওয়ামাত্রই সেদিন হামলা চালানো হতো। এই তথ্য বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিল।

উপরন্তু আন্তর্জাতিক আইনে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বিচ্ছিন্নতাবাদ হিসেবে বিবেচিত হতো এবং যার ফলে বাঙালি তাদের যে আনুষ্ঠানিক সমর্থন, তা হারাত। আর তখনো পরিপূর্ণভাবে বাঙালি আক্রান্ত হয়নি। কাজেই আক্রমণের যুক্তিও বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিল না।

সে জন্য সামগ্রিক বিবেচনায় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এর চেয়ে স্পষ্ট কোনো ভাষণ দেওয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি করণীয় যা, তা করেছিলেন। বলার যা, তিনি তা বলেছিলেন।

লেখক : অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  

সূত্র: এনটিভি