চন্দ্রযানের চাঁদে অবতরণ

ভারত এখন চাঁদে : নরেন্দ্র মোদি

সিল্কসিনটি নিউজ ডেস্ক :

ভারতের চন্দ্রাভিযান সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইভ বক্তব্যে মোদি বলেন, ভারত আজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেস বার্গ থেকে দেওয়া লাইভ বক্তব্যে মোদি বলেন, ‘ ভারত এখন চাঁদে। আজ ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আজকের এই দিনটি ভারতের ইতিহাস চিরদিন মনে রাখবে, এবং আমাদেরকে এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করবে।’

ভারত এর আগেও ২ বার চন্দ্রাভিযানের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু ব্যার্থ হয়েছিল সেসব অভিযান। চন্দ্রযান ৩ চাঁদের অভিমুখে ভারতের তৃতীয় অভিযান এবং এটি সফল। নিজ বক্তব্যে মোদি বলেন, ‘এই অভিযান প্রমাণ করেছে— অতীতের ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া হলে তা সাফল্য এনে দেয়। আকাশের কোনো সীমা নেই এবং আজকের দিনটির জন্য ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা আমাদের স্মরণ করবে।’

বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে নভোযান পাঠাল ভারত। গত ১৪ জুলাই, শুক্রবার স্থানীয় সময় ২ টা ৩৫ মিনিটে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রের শ্রীহরিকোটা শহরের সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ভারতের নিজস্ব রকেট চন্দ্রযান ৩।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের উদ্দেশ্যে পৃথিবী থেকে চন্দ্রযান ৩ যাত্রা শুরু করেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) কর্মকর্তারা।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের উদ্দেশ্যে পৃথিবী থেকে চন্দ্রযান ৩ যাত্রা শুরু করেছে বলে জানিয়েছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)।

ইসরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, চাঁদের মাটি স্পর্শ করার এই অভিযাত্রায় মোট ৪০ দিন সময় নেবে চন্দ্রযান ৩। সবকিছু ঠিক থাকলে আগমী ২৩ থেকে ২৪ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করবে ভারতীয় এই নভোযান।

তবে কোনো কারণে যদি প্রত্যাশিত সময়ে নভোযানটি চাঁদে পৌঁছাতে নাও পারে, সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে চন্দ্রযান চাঁদে নামতে সক্ষম হবে বলে উল্লেখ করেছিল ইসরো।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পূর্বানুমাণ অনুসারে ২৩ আগস্টেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামল চন্দ্রযান ৩।

এর আগে মাত্র ৩ টি দেশ চাঁদে নভোযান পাঠাতে পেরেছে— যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন। এবার সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় যুক্ত হলো ভারতের নামও।

তবে চতুর্থ দেশ হলেও ভারতের এই চন্দ্রাভিযানের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই অভিযান সফল হলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি রোবটযান নামাতে সক্ষম হবে দেশটি। চাঁদের ওই অংশ এখনও খুব কমই জানে মানুষ।

ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযানের এই মহাকাশযান তৈরি হয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার- এই তিনটি অংশ নিয়ে। অরবিটারের নাম ‘চন্দ্রযান’, ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ এবং রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’।

প্রসঙ্গত, ভারতের এই চাঁদের মাটি স্পর্শ করার অভিযান শুরু হয় ২০০৮ সালে। যান্ত্রিক গোলোযোগের কারণে প্রথম সেই অভিযান সফল হয়নি। পরে ২০১৯ সালে ফের আরও একবার চাঁদে নভোযান পাঠানোর উদ্যোগ নেয় দেশটি।

কিন্তু সেবার ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে চাঁদে নামাতে ব্যর্থ হয়েছিল অরবিটার ‘চন্দ্রযান ২’। পুরোনো সেই অরবিটারটি এখনও চাঁদের কক্ষপথে ঘুরছে।

বুধবারের লাইভ বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারত এক বিশ্ব, এক পরিবার এবং এক ও অভিন্ন ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে। সেই হিসেবে আজকের এই সাফল্য কেবল ভারতের সাফল্য নয়। এই কৃতিত্ব কেবল ভারতের একার নয়। এই সাফল্য-কৃতিত্বের ভাগীদার সমগ্র মানবতা।’