ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি কমছে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ২১৩ কোটি (২.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানি থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়নি। কিন্তু এরপর রপ্তানিতে ছন্দপতন ঘটে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বাজারটিতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বাজারে ১২৭ কোটি ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। এর মানে চলতি অর্থবছরে ইতিমধ্যে রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারতের বাজারে রপ্তানি হওয়া শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি পণ্যগুলো হলো তৈরি পোশাক, পাট ও পাটের সুতা, হোম টেক্সটাইল, সয়াবিন তেল, হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিক ইত্যাদি। সার্বিকভাবে রপ্তানি কমার ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ২৩ শতাংশ কমে যাওয়া। কারণ ভারতে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের প্রায় ৫০ শতাংশই তৈরি পোশাক।

অন্যদিকে রপ্তানি কমলেও ভারতের বাজার থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বাড়ছে। দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ৫৩৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৯২ কোটি ডলার। তার মানে চলতি অর্থবছরের জুলাই–জানুয়ারিতে আমদানি বেড়েছে ৯ শতাংশ।

গত কয়েক বছর ধরেই ভারতে রপ্তানি বাড়ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দেশটিতে পণ্য রপ্তানি আয় ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। পাঁচ বছরের মাথায় গত অর্থবছরে সেই আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র চারটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তাও সেটা গত চার বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নামে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে মোট ৫৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি কমেছে ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গত বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রপ্তানি কমে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ বলাটা একটু কঠিন। সামগ্রিকভাবে ভারতের আমদানি কমেছে। আবার তারা তৈরি পোশাকের এই বাজার ধরতে নিজেদের সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা, এক বছরের মধ্যে এই বাজারে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, বেশ কিছুদিন ধরে আমরা প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও রপ্তানি বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছি। তারই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছিল। ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য অপ্রচলিত বাজারেও আমাদের রপ্তানি বাড়ছিল। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। সে অবস্থায় ভারতসহ অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ায় আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম।

এদিকে তৈরি পোশাক ছাড়াও পাট ও পাটসুতা রপ্তানি কমেছে ১ শতাংশের মতো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পাট ও পাটসুতা রপ্তানি হয়েছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়। তবে এই সময়ে চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানি বেড়েছে।

অবশ্য বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতের পণ্য আমদানি কমেছে। ভারত তাদের অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস এপ্রিল-জানুয়ারিতে মোট ৫৬ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬০ হাজার ১৪৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। এসব তথ্য ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের।

এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই আমাদের পণ্য রপ্তানি কমেছে। তারই অংশ হিসেবে ভারতে রপ্তানি কমেছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে, সেটি খতিয়ে দেখতে বিজিএমইএসহ অন্যদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করব।