ভারতীয় ভেরিয়েন্ট সতর্কতায় কোয়ারেন্টিনে কড়াকড়ি

সরকার নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত বাংলাদেশি যাত্রীদেরকে ইফতার সামগ্রী দিতে যান একটি সংগঠনের কর্মীরা। ভ্যাবাচেকা খেলেন তাঁরা। জানতে পারলেন, ইফতার আনতে নাকি কেউ কেউ বাইরে অর্থাৎ বাজারে গেছেন। এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নিয়ে ২৬ এপ্রিল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতফেরত বাংলাদেশি যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন অবস্থা শুরুর দিকে ছিলো ঠিক এমনই! যে যার মতো করে বেরিয়ে ঘুরাঘুরি করেছেন। অনেকে আবার ১৪দিনের বদলে দুই একদিন থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলেও গেছেন।

তবে সেই দৃশ্য এখন একেবারেই বদলেছে। উল্টোচিত্র বিরাজ করছে কোয়ারেন্টিনে। পুলিশ পাহারায় অনেকেটা ‘বন্দি’ দশাতেই কাটাতে হচ্ছে ভারতফেরতদেরকে। বের হওয়া তো দূরের কথা কোনো স্বজন এলে দূর থেকেই দেখে চলে যেতে হচ্ছে।

আখাউড়া দিয়ে এসেছিলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা দম্পতি। তদবির করে আসার দিনই না যেতে পেরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন বলে রাজি হন। পরে সেখান থেকে তাদেরকে থাকতে হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে। একজন যুগ্ম জজও ছাড় পাননি কোয়ারেন্টিন করা থেকে।

শিশু কিশোরদের সংগঠন খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারন সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে শনিবার (২৯ মে) দুপুরে  বলেন, ‘গাজীপুরের আমার এক পরিচিতজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন করে গেছেন। আমি একদিন দেখা করতে গিয়ে দেখি তাদেরকে একপ্রকার বন্দিদশার মতো করেই রাখা হয়েছে। বাইরে পুলিশ পাহারা বসিয়ে রেখে গেইট আটকানো ছিলো। আমি দূর থেকেই ওনার সঙ্গে দেখা করি।’

এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশি যাত্রী আসা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, শুক্রবার এসেছেন ৩৪ জন। গত ২৬ এপ্রিল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আসা যাত্রীর সংখ্যা ১১৪৬ জন। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভারতফেরত ১১৪৬ জন যাত্রীর মধ্যে ২৯০ জনকে ১৪ দিনের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য কুমিল্লায় পাঠানো হয়। জেলায় স্থান সংকুলান না হওয়া ১৯ মে থেকে যাত্রীদেরকে কুমিল্লায় পাঠানো শুরু হয়। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ, বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাতটি হোটেলকে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত ১০টি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে অবস্থানরত যাত্রীর সংখ্যা ২৪২ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষে মোট ৫৭১ জন যাত্রীকে অবমুক্ত করা হয়। শুক্রবার ১৫ জনকে অবমুক্ত করা হয়।

অপরদিকে আখাউড়া দিয়ে আসা ভারতফেরত মোট ২৬ জন যাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার একদিনেই ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শুক্রবার রাতের রিপোর্টে আরো তিনজনের করোনা শনাক্তের খবর জানা যায়। তবে এখন পর্যন্ত কারো শরীরে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম জানান, কোয়ারেন্টিন বিষয়ে কোনো ধরণেই ছাড় নেই। ১৪ দিন পার হওয়ার পরই অবমুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। জেলায় স্থান সংকুলান না হওয়া ভারতফেরত যাত্রীদেরকে কুমিল্লায় পাঠাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ