রাজশাহীতে পাসপোর্টধারী ভারতীয় নাগরিক হাফেজ শীর্ষ জঙ্গি নাকি মাদক ব্যবসায়ী?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুলিশের প্রতিবেদন গোপন করে ভারতীয় নাগরিককে পাসপোর্ট প্রদানের অভিযোগে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ।

এদিকে সন্দেহ করা হচ্ছে, ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহমেদ একজন শীর্ষ মাদক কারবারি অথবা জঙ্গি দলের সদস্য। এ কারণে ভারত থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে তিনি বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে সৌদি আরবে পালিয়ে যান।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিককে পাসপোর্ট দেওয়াটি বড় ধরনের অপরাধ। হাফেজ আহমেদের বিরুদ্ধে ভারতে দুই-তিনটি মামলা আছে। তবে ওই মামলাগুলো নাশকতা সংশ্লিষ্ট নাকি মাদক সংশ্লিষ্ট সেটি আমরা এখনো নিশ্চিত নয়। ফলে হাফেজ শীর্ষ জঙ্গি নাকি মাদক কারবারি সেটিও নিশ্চিত নয়। তবে এ দুটির যে কেনো একটি-সেটি প্রায় নিশ্চিত বিভিন্ন সংস্থাগুলো। হাফেজ আহমেদের সে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

আরেকটি সূত্র জানায়, ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে বিপুল অংকের অর্থের লেনদেন হয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশী একটি চক্রও জড়িত। যারা রাজশাহীতে হাফেজ আহমেদকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাকে পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করেছে নানাভাবে। তবে এই চক্রটিকে এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।

এদিকে রাজশাহীতে থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট প্রদানের অভিযোগে যাদের নামে দুদক মামলা করেছে, তারা হলেন, রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম, ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহমেদ, পাসপোর্ট অফিসের এমএলএস রঞ্জু লাল, অফিস সহায়ক হুমায়ুন কবির, উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাস উদ্দিন, রেকর্ড কিপার ইব্রাহিম হোসেন ও মুদ্রাক্ষরিক আব্দুল ওয়াদুদ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ জুন মামলার আসামি হাফেজ আহমেদ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্বেও রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম সপুরা এলাকার বাসিন্দা হিসেবে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য প্রি-এনরোলমেন্ট (আবেদন) সম্পন্ন করেন। এরপর মামলার দুই নম্বর আসামি রঞ্জু লাল সরকার ওই আবেদনটি অবৈধভাবে নিজ হেফাজতে রাখেন।

পাসপোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে ওই বছরের ১২ জুলাই পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য ৪৩ টি আবেদনপত্রের সাথে হাফেজ আহমেদেরও প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয় মহানগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে। এরপর ৩১ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে হাফেজ আহমেদ ভারতীয় নাগরিক বলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয় পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু এই তথ্যটি গোপন করেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাসপোর্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদনের জন্য মডিউলে চলে যায়।

এরপর একই বছরের ৩০ আগস্ট পাসপোর্টটির চূড়াান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়। অনুমোদনের পর ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পাসপোর্টটি গ্রহণ করেন। পাসপোর্ট পেয়ে তিনি বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০৩৫ ফ্লাইট যোগে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী হাফেজ আহমেদ সৌদি আরবের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তাঁর আর খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পাসপোর্ট এর আবেদনসহ অন্যান্য সকল কাগজপত্র রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে গায়েব করে দেয়া হয়। এই অপরাধের সঙ্গে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরস্পর জড়িত ছিলেন।

অন্যদিকে এই ধরনের অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী রঞ্জু লালকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বেশকিছু দিন পরে শেষে তাঁকে নাটোর থেকে উদ্ধার করা হয়।

স/আর