ভারতভাগ: চরম আর্থিক সংকটে পড়েন মুসলমান বাঙ্গালীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সালাউদ্দিন আবু আসাদ। পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমানে ছিল মি.আসাদের বাড়ী। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগের পর মি. আসাদ চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে।

দেশভাগের ৭০ বছর উপলক্ষে সালাউদ্দিন আবু আসাদের কথা।

১৯৪৬ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। মুসলমানরা সেখানে ছিল একেবারেই একঘরে করে রাখার মত। যোগ্যতা থাকার পরেও অনেকেই সরকারি চাকরীতে সুযোগ বলতে গেলে একেবারেই পাচ্ছিলেন না।

অনেক শিক্ষিত যুবক বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।

বর্ধমানের সম্ভ্রান্ত মুসলিম বাঙ্গালি পরিবারে জন্ম নেয়া সালাউদ্দিন আবু আসাদ ২২ বছর বয়সে নতুন এবং একই সাথে অনিশ্চিত এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

মি. আসাদের ভাষায় “চাকরী তখন অনেক অল্প এবং মুসলমানদের জন্য পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। আমি সেখানকার রেলওয়েতে দরখাস্ত করেছিলাম, রিটেন টেস্টে অ্যালাউ হয়েছিলাম। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার পরে আর চাকরী হয় নি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছি সেখানেতো পরীক্ষার জন্য ডাকেই নি”।

“১৯৬২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী মুসলমানরা যে ধরণের ভয়ে থাকতেন সেই ভয় এখন আর নেই”-বলছিলেন তিনি।

সংবাদদাতা ফারহানা পারভীনকে তিনি দেখাচ্ছিলেন বর্ধমানে ফেলে আসা পরিবারের অন্য সদস্যদের ছবি

সেই সময়ের সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব কতটা ভয়াবহ ছিল যে সেটা স্কুলের ছোট বাচ্চাদের মনের মধ্যেও গেঁথে গিয়েছিল। মি. আসাদ যখন স্কুলে পড়েন তখন মুসলমান ছাত্র হওয়ার কারণেই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ স্কুলে তাকে অস্বস্তি নিয়েই থাকতে হয়েছে।

তাঁর বর্ণনায় ” আমার যেটা প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা সেটা হল, স্কুলে যখন আমি পড়ি তখন একদিন আমার এক ক্লাস-মেট পেন্সিল কাটার ব্লেড বের করে বললো-গলা কেটে দেবো তোর। এখন এই কথা গুলো বলার মত পরিবেশ তখন ছিলো”।

“আর যখন কলেজে তখন সবাই একটু বড় তখনো দেখেছি কোন কিছুর মত বিরোধ হলেই বলতো পাকিস্তানে চলে যাস না কেন? এই ধরণের কথাবার্তা হত। যেটা আমাদের দ্বিধান্তিত করে দিত। ”

তবে এসব কিছুর উপরে যেটা ছিল সেটা হল অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ঢাকায়। কারণ সেই যুদ্ধের সময়টাকে পূর্ব-ভিটাতে ফিরে যাওয়ার বা এখানেই নিরাপদ কোন আশ্রয় পাওয়া সম্ভব ছিল তাঁর জন্য।

পশ্চিমবঙ্গের কাশেম পুরের নিজের বাড়ির ছবি দেখিয়েছিলেন মি. আসাদ
পশ্চিমবঙ্গের কাশেম পুরের নিজের বাড়ির ছবি দেখিয়েছিলেন মি. আসাদ

এখানে এসে মি. আসাদ যখন বিয়ে করেন যখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার আশায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন তবে সব কিছু একেবারেই সহজ বা তাঁর পক্ষে যায় নি।

তিনি বলছিলেন ” এখানে আমার পর জীবন যে খুব সহজ ছিল সেটা না। আ,আর চাকরীর বেতন, আর জিনিষপত্রের মূল্য এই দুই এর সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে”।

যথেষ্ট কষ্টভোগ করতে হয়েছে। আমরা যেহেতু মাইগ্রেট করে এসেছি, সাথে কিছুই নিয়ে আসিনি। চাকরীই সম্বল। তখন আমার তিন সন্তান। আমাকে যথেষ্ট ফাইট করতে হয়েছে। আমি টিউশনি করা শুরু করলাম।

মি. আসাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এখন তো আগের অবস্থা নেই এখন কি ফিরতে ইচ্ছা করে পশ্চিমবঙ্গে?

উত্তরে তিনি বলেছিলেন ” মানুষ যেখানে জন্মায় এবং বড় হয় তার মনটা সেখানেই থাকে। আমার মনটা সব সময় চায়। আমার মায়ের কবর আছে বর্ধমানের শহরে, আব্বার কবর আছে গ্রামের বাড়ীতে। সাংঘাতিক ভাবে আমার মন পরে থাকে সেখানে”। সূত্র: বিবিসি বাংলা