বড়দিনের প্রস্তুতি শহরের বাইরে উৎসবের ছোঁয়া

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

হিম বাতাসে এখন বড়দিনের গন্ধ। শহর ঢাকা কিংবা সারা দেশে বইছে বড়দিনের আনন্দ। শহরের বাইরে বড়দিনের প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলাম, গাজীপুর পুবাইলে- কালীগঞ্জ, ভাদুন এলাকায়। ঘরে ঘরে সেখানে উচ্ছ্বাস আর ব্যস্ততা। পরিচয় হলো স্বপ্না রোজারিওর সঙ্গে। তাঁর ছেলে কিশোর রোজারিওকে নিয়ে ছোট্ট গোশালা সাজাচ্ছেন সামর্থ্য অনুযায়ী। বারান্দাটাও সেজেছে বাহারি কাগজে। তার বাইরে উঠানে আছে শীতের হলুদ গাদা ফুল। গোবরে লেপা উঠানটা চকচক করছিল। ছেলের অপেক্ষা বড়দিনের আগের রাতে আতশবাজি ফোটাবে। আর মা স্বপ্না ভেবে মরছেন, নিত্যনতুন কোন পিঠায় প্রতিবেশীর মনোযোগ কাড়বেন। আলো ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি হয়তো এই গ্রামে কারো ঘরেই নেই। তবে আছে প্রভু যিশুর জন্মদিন ঘিরে আনন্দের অফুরান উৎস।

 

উঠোনের বাইরে রাস্তার ধার ঘেষে প্রায় ১২-১৩ জন মানুষের জটলা। গরু জবাই হয়েছে। প্রতিবছরই বড়দিন ঘিরে হয়ে থাকে। এটাই গ্রামের রেওয়াজ, বলছিলেন জটলারই একজন, রিচার্ড পিউরিফিকেশ। আনন্দ উড়ছিল গ্রামটিতে। সবাই মিলে- সবার জন্য ভাগ হচ্ছিল উৎসবের আনন্দটা। এজন্যই বোধহয় দিনটা বড়দিন!

 

যিশু সত্য। যিশু জীবন। যিশু আলো। যিশু ভালোবাসা। আর যিশুই আনন্দ। পাপে পতিত ধরিত্রীকে পাপমুক্ত করতেই ত্রাণকর্তা হিসেবে যিশুর জন্ম, বিশ্বাস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের। তাই ঘড়ির কাঁটার হিসাব নয়, মনুষ্যত্ব আর মহানুভবতার মাপকাঠিতেই দিনটি বড় দিন।

২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যাতেই ‘মধ্য রাতের মিশা বা প্রার্থনা’তে মুখর হবে পুবাইল ভাদুনের উত্তম মেষপালক গীর্জা (গুড শেফার্ড চার্চ)। পরে দিন ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় হচ্ছে আরেকটি প্রার্থনা। তবে সকাল সাড়ে ৮টায় হবে সবচেয়ে বড় প্রার্থনাটি, জানালেন ফাদার পরিমল রোজারিও।

 

গীর্জার বড় ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়ে গেছে। তৈরি গোশালাটা। বিশাল প্রার্থনা ঘরে বাহারি কাগজে লেখা সারি সারি মেরি ক্রিসমাস। এখানেই প্রার্থনা আর কীর্ত্তন হবে। জন্য গেল কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছে কীর্ত্তনীয়া দল।

 

ভাদুন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা- কালীগঞ্জ তুমুলিয়া গীর্জা। অনেক বড় পরিসর। আয়োজনটাও বড়। ফটক পেরোতেই রাস্তায় ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে আলপনা আঁকছে। চোখে মুখে চপলতা। জানতে চাইলে খলবলিয়ে বলছিল, ‘বড়দিন মানেই তো আনন্দ। আমরা আলপনায় সেই আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মাঝে।’

 

গীর্জার বাইরে হাজার হাজার বেলুন বড় বড় সুতায় বেঁধে ঝোলানো হচ্ছিল গীর্জার চূড়া থেকে সামনের মাঠ অবধি। পুরো কাজটাই করছিল এক ঝাঁক তরুণ। মাঝেমধ্যে দেখভাল করতে আসছেন বয়স্করা। দিন ফুরোলেই বড় দিন। অপেক্ষার আনন্দটাও কম সুন্দর নয়। শুভ বড়দিন!

লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, একাত্তর টিভি

সূত্র: এনটিভি