ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে দারুণ এক সমঝোতায় পৌঁছেছি: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

অনেক চড়াই-উতরাই, বাঁধা, সমালোচনা ও অনিশ্চয়তার পর ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছল যুক্তরাজ্য।

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এ সমঝোতায় পৌঁছান। খবর বিবিসির। বিষয়টি জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও।

এক টুইটে তিনি লেখেন- ‘দারুণ এক সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণও ফিরেছে।’

বিবিসি বলছে, চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার আগে তাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। তাই আগামীকালশনিবারই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার আশা করছেন জনসন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নতুন ব্রেক্সিট চুক্তির প্রস্তাবগুলোর বেশিরভাগই সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র করা চুক্তির প্রস্তাবগুলোর মতোই। মূলত উত্তর আয়ারল্যান্ডবিষয়ক প্রস্তাবগুলোতেই পরিবর্তন এনেছেন জনসন।

জনসনের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে যা রয়েছে-

* নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইইউর একক মার্কেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে।

* বিতর্কিত ‘ব্যাকস্টপ’ থাকবে না। সমালোচকদের ভয়, এই ‘ব্যাকস্টপ’-এর কারণে যুক্তরাজ্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউর সঙ্গে কাস্টমস ইউনিয়নে থেকে যেতে হতে পারে।

* উত্তর আয়ারল্যান্ড বরং যুক্তরাজ্যের কাস্টমস টেরিটোরির অংশ হিসাবে থাকবে। ফলে ব্রেক্সিটের পর ভবিষ্যতে সরকারের যেকোনো বাণিজ্যচুক্তিতে তারা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে।

* কিন্তু একই সঙ্গে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইইউর কাস্টমস জোনে প্রবেশদ্বার হিসেবেও থাকবে।

* কোন কোন পণ্য একক বাজারে প্রবেশ করার ঝুঁকিতে আছে তা নির্ধারণ করবে ইইউ/ইউকে যৌথ কমিটি।

* উত্তর আয়ারল্যান্ড অ্যাসেম্বলি নতুন বাণিজ্যব্যবস্থা চালু রাখার প্রশ্নে প্রতি চার বছর পরপর ভোট অনুষ্ঠান করবে।

* সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।

এ চুক্তি নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য এসেছে অনেক।

জনসনের এমন চুক্তির বিষয়ে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতারা বলছেন, তেরেসা মে যে ব্রেক্সিট চুক্তি করেছিলেন, জনসনের নতুন প্রস্তাবিত চুক্তি তার চেয়েও অনেক খারাপ। এটি সংসদ সদস্যদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা ভিকি ইয়াং জানিয়েছেন, ‘বরিস জনসনের এ নতুন চুক্তি উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) সমর্থন করবে না। তারা এর পক্ষে ভোট দেবেন না।’

নতুন চুক্তির প্রস্তাবগুলো উত্তর আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য সহায়ক নয় এবং এতে ইউনিয়নের অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন হবে এক বিবৃতিতে মত দিয়েছে নর্দার্ন আইরিশ পার্টি।

আর এই দলটির কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ভোট পাওয়ার আশায় রয়েছে জনসনের সরকার।

তবে নতুন ব্রেক্সিট চুক্তিকে সুষ্ঠু এবং ভারসাম্যপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদে জাঙ্কার। তিনি চুক্তিতে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক চিঠিতে জাঙ্কার বলেছেন, ‘ইইউর ২৭ সদস্য রাষ্ট্রকে চুক্তিতে অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করছি। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শেষ সময় এখনই।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের সুরে সুর মিলিয়ে বরিস জনসন বলেছেন, ‘আর কোনো দেরি না করে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করে ভবিষ্যতে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার সময় এখনই। যুক্তরাজ্য এবং ইইউ দুয়ের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে বিষয়টি। ’

বিবিসি জানিয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপে কি করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হাউস অব কমন্সে শনিবার বিশেষ কোনো অধিবেশন বসবে কিনা সে প্রশ্নে ব্রিটিশ এমপিরা পরে ভোটাভুটি করবেন।

অধিবেশন বসার বিষয়টি ভোটে অনুমোদন পেলে সরকার তখন চুক্তির ওপর ভোট অনুষ্ঠান করতে পারবে বলে জানিয়েছেন কেবিনেট অফিস মিনিস্টার মাইকেল গভ।