‘বেহুলা’ গান নিয়ে শ্রোতার যে মন্তব্য হৃদয় কাঁপিয়ে দেবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  প্রত্নতাত্তিক ইতিহাস ও লোকগাঁথা ‘বেহুলা’। প্রাচীন বাংলার বিখ্যাত মঙ্গলকাব্য মনসামঙ্গলের প্রধান চরিত্র বেহুলা। তিনি চাঁদ সওদাগরের ছেলে লখিন্দরের স্ত্রী। সাপের কামড়ে মৃতপ্রায় স্বামীকে বাঁচিয়ে আনতে ভেলায় চড়ে বেহুলার অদম্য দুঃসাহসিক অভিযাত্রার পৌরাণিক গল্প এই বেহুলা।

আর সেই বেহুলাকে ফের সামনে এনে হাজির করেছে শূন্য ব্যান্ড। গানটির শিরোনামও ‘বেহুলা’। মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যে গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষকরে তরুণ প্রজন্মের কাছে গানটির গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

করোনাকালেও গানটির শ্রোতাপ্রিয়তা রীতিমতো ঈর্ষণীয় ব্যাপার।  ইউটিউবে প্রকাশের পর পর গানটিতে মজেছেন সঙ্গীতপ্রেমীরা। এক সপ্তাহের মধ্যে ৪১ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে। মন্তব্য জমা পড়েছে প্রায় ১৭ হাজার। যার প্রায় সবগুলোই ইতিবাচক। নেটিজেনরা প্রশংসায় ভাসাচ্ছে গানটির নির্মাতাদের।

এসব মন্তব্যের মধ্যে চোখে পড়ে যায় যে কথাটি যা যেকোনো হৃদয়কে নাড়া দেবে। পাষাণ হৃদয়ের মানুষেরও চোখে জল এনে দেবে।

মন্তব্য হচ্ছে – ‘আমি একজন ক্যানসার রোগী। করোনায় টানা কয়েক মাস হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলাম। অসুস্থতায় আমার দিন-রাতের কোনো পার্থক্য ছিল না। কিন্তু আমার সঙ্গে একজন বেহুলা (আমার ওয়াইফ) ছিল। একটা রুমে জাগতিক সবকিছু বাদ দিয়ে কীভাবে কয়েকটা মাস ছিল। এই সময়ে তার ছোট ভাই দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমাকে ছেড়ে যেতে হবে বলে শেষযাত্রায় যেতে পারেনি। যদি সাধ্য থাকত, সুন্দর এ গান আমি আমার প্রিয়তমা বেহুলাকে উৎসর্গ করতাম।’

এভাবেই নিজের স্ত্রীকে লোকগাথার বেহুলার সঙ্গে তুলনা করলেন সেই ক্যানসার রোগী।

ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর মতো বেহুলার ছায়া নিজের মায়ের মাঝে খুঁজে পান আরো এক শ্রোতা।

মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেছেন, ‘গানটা শুনলেই মনে হয়, যেন এটা আমার আম্মুকে নিয়ে গাওয়া। আমার আব্বু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে ছিলেন। তখন আম্মু ঠিক এভাবেই জীবন বাজি রেখে দিন–রাত এক করে আব্বুর সেবা–শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। সত্যি বলতে, আম্মু না থাকলে আমরা আব্বুকে বাঁচাতে পারতাম না।’

বেহুলাকে মা, স্ত্রী, বোনের মাঝে যে কেউ খুঁজবে -এমনটাই বক্তব্য শূন্য ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য ইমরুল করিম এমিলের।

কারণ, নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি মাথায় রেখেই বেহুলা গানটি করেছেন তারা।

এক গণমাধ্যমকে ইমরুল করিম এমিল বলেন, “বেহুলা” বাংলার লোকগল্প। আমরা দেখি, নারীদের অনেকভাবে উপস্থাপন করা হয়, কখনো প্রেয়সী, কখনো পাষাণী। মেয়েদের খুব কমই কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এই গানের মাধ্যমে অসম্ভব যাত্রার মাধ্যমে বেহুলা যে লখিন্দরকে ফিরিয়ে এনেছেন, তাই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চেষ্টা করেছি। শুধু বেহুলা-লখিন্দর নন, যারা প্রিয় মানুষকে খুশি করার জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করেন, যুদ্ধ করেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চেয়েছি।’

সূত্র: যুগান্তর