বেহাল গ্রামীণ রাস্তায় দুর্ভোগে রাজশাহীর লাখ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী জেলা শহর থেকে দুর্গাপুর উপজেলা সদরের দূরুত্ব প্রায় ৩১ কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে দুটি রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় উপজেলা সদরে। এর একটি রাস্তা হলো, কাটাখালি-দুর্গাপুর। আর অপরটি হলো, শিবপুর-দুর্গাপুর। কিন্তু দুটি রাস্তার অধিকাংশজুড়েই খানা-খন্দক আর ভাঙাচুরাই যেন বিদ্ধস্ত হয়ে আছে। ফলে দুটি রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। বিশেষ করে কাটাখালি থেকে দুর্গাপুরের চৌপুখরিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং শিবপুর-দুর্গাপুর রাস্তার পালি থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটারজুড়ে খানা-খন্দকে ভর্তি হয়ে আছে। এতে করে দুর্ভোগের পাশাপাশি এ দুটি রাস্তায় প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শুধু দুর্গাপুরের এই দুটি প্রধান রাস্তায় নয়, রাজশাহীর মহাসড়ক থেকে শুরু করে উপজেলা এবং গ্রাম পর্যায়ের অধিকাংশ রাস্তাগুলোতেই এখন খানা-খন্দকে ভর্তি। কোনো রাস্তা থেকে কার্পেটিং উঠে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যেন মাটির রাস্তায় পরিণত হয়ে গেছে। আবার যেসব রাস্তা কিছুদিন আগে সংস্কার করা হয়েছে, সেগুলোর কাজও নি¤œমাণের হওয়ায় এখন ওইগুলোও খানা-খন্দকে ভর্তি হয়ে আছে। কোনো কোনো রাস্তা একদিকে কাজ চলছে, তো আরেকদিকে ভেঙে-চুরে গেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ভাঙা রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজশাহীর নয়টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। প্রায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

পুঠিয়ার মহেন্দা গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘কাটাখালি-দুর্গাপুরের রাস্তাটি দৈর্ঘ প্রায় ২০ কিলোমিটার। কিন্তু এই ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার জুড়েই ভাঙা-চুরা। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। গর্তগুলো এতোটা গভীর যেন গাড়ীর চাকা নেমে গেলেও উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে। এই রাস্তাটি গত বছরও সংস্কারও করা হয়েছে। কিন্তু নি¤œমাণের কাজের কারণে কয়েকদিন পরেই সেটি বেহাল দশায় পরিণত হতে থাকে। বিশেষ করে গত বর্ষায় এই রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে মহেন্দ্রা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাউ উদ্যোগ নেয় কয়েকটি অংশ সংস্কারের। এরপর থেকে কোনো মতে যান চলাচলের অবস্থা হয় গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটিতে।’

দুর্গাপুরের কুহাড় গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গনি বলেন, রাস্তাটির যেন বাপ-মা নাই। কয়েক বছর পর পর দেখি সংস্কার করা হয়। কিন্তু নামেমাত্র সংস্কার লাখ রাখ টাকা লুটপাট করা হয়। এর ফরে যেকার সেই অবস্থায় পরিণত হয়। আর দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। রাস্তাটির ভাঙাচুরার কারণে অটোরিকশায় চলাচল করতেও ভয়ে যান মুকিয়ে যায়।’

দুর্গাপুরের পালি বাজারের বাসিন্দা মুঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে এতো বেশি খারাপ হয়ে আছে যে যানবাহন চলায় দায়। সারা বছর কোথাও কোথাও পানিও জমে থাকে। বিশেষ করে পালি বাজার পার হয়ে সমিলের কাছে এবং সমিলের পশ্চিম পাশের কয়েকটি স্থানে একেবারে দুরঅবস্থা। দুটি স্থানে বাধ্য হয়ে এলজিইডি অফিস থেকে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অধিকাংশজুড়ে ভাঙা-চুরার কারণে যান চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে।’

বাগমারার শামীম হোসেন জানান, এ উপজেলার মাথাভাঙা থেকে বাইপাড়া, মাদারী গঞ্জ থেকে মচমইল, মচমইল থেকে খালগা রাস্তাগুলোর করুণদশা। রাস্তা তিনটি দিয়ে যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। মাঝে-মধ্যেই ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু রাস্তাগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।’
রাজশাহী জেলা শহর থেকে তানোর উপজেলা সদরে যাতায়াতের অন্যতম রাস্তাটিও বেহাল দশায় পরিণত হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে কয়েকটি স্থানে সংস্কার করা হলেও বায়া থেকে শুরু করে কাশিম বাজার টপর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারজুড়ে খানা-খন্দকে ভর্তি। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তগুলো যে বর্ষাকালে একেকটি পুুকুরে পরিণত হয়।

পবার দুয়াড়ি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘রাস্তাটির কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের কারণে যান চলচল করছে অনেক ঝুঁকি নিয়ে। আবার যাত্রীরাও পড়ছেন ভোগান্তিতে। পবার বায়া বাজার থেকে তানোর উপজেলা সদরে যেতে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট সেখানে রাস্তাটির ভাঙা-চুরার কারণে সময় লাগছে অন্তত ১ ঘন্টা।’

রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর কাকনহাট পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তাটিরও বেহালদশা। এই রাস্তাটিরও অধিকাংশজুড়ে খানা-খন্দক আর গর্তে ভরা। কোথাও কার্পেটিং উঠে গিয়ে মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির সংস্কারে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান।

এদিকে জেলার মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা এবং পুঠিয়ার গ্রামীণ রাস্তাগুলোর অধিকাংশে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এরই মধ্যে কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগও নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তর (এলজিইডি) এবং স্থানীয় পৌরসভাগুলো।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ যেসব রাস্তায় কাজ হচ্ছে, সেগুলোর মাণ খুবই খারাপ হচ্ছে। ফলে সংস্কার কাজ হলেও এইসব রাস্তার স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

দুর্গাপুরের সিংগা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, বহরমপুর থেকে সিংগা রাস্তাটি সংস্কার করা হলো কয়েকদিন আগেই। কিন্তু এখনোই রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। নি¤œমাণের কাজ হওয়ার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

এদিকে জেলার রাস্তাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশকিছু রাস্তা এখনো খানা-খন্দক আছে। এসব রাস্তা সংস্কারের জন্য দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু রাস্তায় কাজও শুরু হয়েছে। তবে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

 

স/আ