বেড়াতে এসে মায়ের লাশ নিয়ে ফিরল অবুঝ দুই শিশু

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় কারখানায় হাজিরা শেষে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে শ্রমিক বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন। বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি।

নিহত পোশাকশ্রমিক আঞ্জুয়ারা সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চর নাটিপাড়া এলাকার জামাল বাদশার স্ত্রী। কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন আঞ্জুয়ারা। তার স্বামী পাশের একটি গার্মেন্টস কারখানায় সাধারণ শ্রমিকের কাজ করেন।

জানা গেছে, অভাবের সংসারে সিরাজগঞ্জ থেকে গাজীপুরে এসে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন আঞ্জুয়ারা। চাকরিসূত্রে পরিচয়ের পর পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন একই এলাকার জামাল বাদশাকে। অর্থ সংকটের কারণে ছেলে জাকারিয়া (১০) ও মেয়ে জয়াকে (৮) কাছে রাখতে পারেন না এ দম্পতি।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের চরগিরিশ গ্রামে দাদা-দাদির কাছে থেকে তারা পড়ালেখা করছে। গত সপ্তাহে বেড়ানোর জন্য জাকারিয়া ও জয়া মা-বাবার কাছে আসে। কিন্তু বুধবার তাদের গ্রামে ফিরতে হয়েছে মায়ের লাশ নিয়ে।

কারখানায় হাজিরা শেষে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে শ্রমিক বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান আঞ্জুয়ারা। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আঞ্জুয়ারার লাশের সুরতহাল করা হয়। পরে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যার পর স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে রওনা দেন। আঞ্জুয়ারার দুই শিশুসন্তানও মায়ের লাশের সঙ্গে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে সিরাজগঞ্জে গ্রামের পথে রওনা হয়।

রাতে আঞ্জুয়ারার দেবর সোহাগ রানা বলেন, ‘এখন আমরা গাড়িতে, গ্রামে ফিরছি। মায়ের মৃত্যু ভাতিজা-ভাতিজি মানতে পারছে না। অবুঝ দুই শিশুর কান্না কোনোভাবেই থামছে না। আমাদের কোনো সান্ত্বনা কাজে আসছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভাতিজাকে পড়াশোনা করিয়ে বড় অফিসার বানানোর স্বপ্ন ছিল ভাবির।’

ভাইয়ের বেতনে নিজেরা চলতেন; ভাবির পুরো বেতন ছেলে-মেয়ের জন্য বাড়ি পাঠাতেন। তিনি আন্দোলন করতেন না। এ ক’দিন অফিসেও যাননি। বেড়াতে আসা ছেলে-মেয়েকে সময় দিতেন। অথচ আজ (গতকাল) হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে তাকেই প্রাণ দিতে হলো।’

জামাল ও আঞ্জুয়ারা গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী জরুন এলাকায় আলাল মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বুধবার সেখানে জাকারিয়া ও জয়ার ‘মা, মা’ কান্নার শব্দে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

হাসপাতালে স্ত্রীর লাশের পাশে থাকা জামাল বাদশা বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রী তো আন্দোলনে যায়নি। আঞ্জুয়ারা সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজে ছিলেন।’

আঞ্জুয়ারার স্বজন রাশিদা খাতুন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ছেলেমেয়ে নিয়ে গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল আঞ্জুয়ারার। কিন্তু তা আর হলো না। আমার ভাতিজার বউ আঞ্জুয়ারা বাসায় ছোট্ট দুই সন্তান রেখে কারখানায় হাজিরা দিতে গিয়েছিল। সে কখনও আন্দোলনে যায়নি।’