বৃত্তির টাকায় ১০০ টি করোনা টেস্টিং কিট দেশে পাঠাল চায়নাতে থাকা জয়পুরহাটের মিজানুর

এস এম শফিকুল ইসলাম:
হাজারো মাইল দূরে থেকে দেশের জন্য এগিয়ে এসেছেন চায়না নানথোং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত তরুণ মিজানুর সরকার।

তিনি বৃত্তির টাকা বাঁচিয়ে সেই টাকায় ১০০ টি করোনাভাইরাস টেস্টি কিট কিনে দেশে পাঠাচ্ছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কিটগুলো দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

মিজানুর রহমান সরকার জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর সরকাপাড়া গ্রামের আবু জাফর সরকারের ছেলে।

জাতীয় সংসদের হুইপ, জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই ও ক্ষেতলাল) আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মিজানুর রহমান সরকারকে মানবিতা ও অভিবাদন জানিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে তিনি এই পোষ্টটি দিয়েছেন।

গত ২০ মার্চ মিজানুর রহমান তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোষ্ট দেন। তিনি ওই পোষ্টে লেখেন, জয়পুরহাটে যারা দায়িত্বশীল আছেন তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি মিডিয়া মারফত জানতে পারলাম জয়পুরহাটে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কোনো কিট নেই।তাই আমি চায়না থেকে করোনা ভাইরাস টেস্ট করার জন্য কিছু কিট ডোনেট করতে চাই। এ বিষয়ে করণীয় প্রক্রিয়া জানার জন্য জয়পুরহাটে যারা স্বাস্থ্য বিভাগে জড়িত আছেন তাঁদের সাহায্য কামনা করছি। ফেসবুকে ওই পোষ্ট দেখে তাঁর মুঠোফোন নম্বর দিতে বলেন হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এরপর হুইপ তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন।

হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তাঁর ফেসবুকে দেওয়া পোষ্ট হবুহু তুলে ধরা হলো। মানবিকতা ও অভিবাদন। একটি ছেলে চায়না থেকে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছে যে, সে জয়পুরহাটে কিছু করোনা টেস্টিং কিট পাঠাতে চায়। জয়পুরহাটের দায়িত্বশীল কেউ যেন যোগাযোগ করে। আমার চোখে পড়ায় তাকে তার ফোন নম্বর দিতে বলি। সে নম্বর দিলে আমি ফোন করি। সে চায়নার নানথোং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে প্রায় গৃহবন্দি। বাহিরে বেরুতে পারে না। কিন্তু দেশের জন্য, এলাকার জন্য তার হৃদয়ের আকুতি অনুভুব করে আমি অভিভূত। সে মানুষের জন্য কিছু করতে ছটফট করছে। সে কিছু করোনা টেস্টি কিট পাঠাতে চায় কোনো উপায় পাচ্ছে না, রাস্তাও পাচ্ছে না। আমি তাকে পূনরায় ফোন দিলাম রাত পোহালে বিমান প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগীতায় নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়ে তাকে দিলাম। আমার ফিরতি ফোন পেয়ে আনন্দে তরুণটির চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে তা একজন পিতা হিসেবে হাজার মাইল দূরে বসেও অনুভব করলাম।

তাকে ঠিকানা দিলাম, চায়নার গোয়াংজুতে ইউএস বাংলার জিএসএ অফিসে মালামাল পৌঁঁছানোর জন্য। সে যে কি খুশি, এই খুশিতে মিলিয়ন ডলারে কেনা সম্ভব নয়। সে তার বৃত্তির টাকা বাঁচিয়ে অনেক কষ্ট করে ১০০ টি টেস্টিং কিট, টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় এসিড ও ড্রপ কিনে কুরিয়ারে গোয়াংজু পৌঁছে দিয়েছে। খুব লজ্জা নিয়ে বলেছে, আমি ছাত্র মানুষ মাত্র ১০০ টি দিতে পারলাম, ইচ্ছে ছিল কমপক্ষে ৫০০ দেবার। আমি বললাম তোমার এই ১০০ আমাদের কাছে ১ লাখের সমান। আশা করছি ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ আগামীকাল এগুলো দেশে আনবে। ছেলেটির মানবিকতা আমাকে অভিভূত করেছে। এরই নাম দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যেবোধ।

কিটগুলো চীন থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।

ইউএস বাংলার একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে কিটগুলো দেশে পৌঁছাবে। এরপর হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, মিজানুর রহমানের পাঠানো কিটগুলো বৃহস্পতিবার পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স/অ