বুদ্ধিজীবীদের অসামান্য মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

আলেম শব্দের অর্থ জ্ঞানী। ইসলাম জ্ঞানচর্চার আলোকবর্তিকা বুদ্ধিজীবীদের অতুলনীয় সম্মান দিয়েছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো মানুষ। আর মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো আলেমরা। জ্ঞানচর্চার প্রতি ইসলামের ইতিবাচক মনোভাবের উৎস আল কোরআন। কোরআনের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পড় তোমার প্রতিপালকের নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ আলো যেমন অন্ধকার দূরীভূত করে তেমন জাহেলিয়াত বা অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করে জ্ঞান সত্য সুন্দর কল্যাণের পথকে আলোকিত করে।

আল কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতারা এবং ন্যায়নিষ্ঠ আলেমরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৮। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমানদার এবং যারা আলেম, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।’ সুরা মুজাদালা আয়াত ১১।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের সব সময় জ্ঞান সাধনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘শিক্ষিত সম্প্রদায় নবীর উত্তরাধিকারী। যে জ্ঞানকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে সে তার এক বিরাট অংশ অধিকার করেছে এবং যে জ্ঞানার্জনের পথে নিজেকে নিয়োজিত করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করেন।’ ‘জ্ঞানের অন্বেষণে যে তার বাসস্থান ত্যাগ করে সে আল্লাহর পথে ভ্রমণ করে।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন যুদ্ধে বন্দী অমুসলিম আলেম বা বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিপণ হিসেবে আর্থিক বা বৈষয়িক সুবিধার বদলে তারা কোনো মুসলমানকে অক্ষরজ্ঞান দান করলে মুক্তি দেওয়া হবে এমন শর্ত নির্ধারণ করতেন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাতে কিছু সময় জ্ঞানচর্চা করা সারা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ দারিমির সুনান থেকে মিশকাতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস হত্যার শিকার হন। এ হত্যাকান্ড যে ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ হত্যাকান্ডের চেয়ে জঘন্য তা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অনুমান করা যায়।

ইসলাম যে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকে জঘন্য অপরাধ মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধে তারা জড়িত ছিল। আমাদের দেশের কেউ কেউ এসব অপকর্মে মদদ জুগিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডেও তাদের ভূমিকা ছিল। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই জালিমের সহায়তা করাকে অনুমোদন করে না।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সত্যকে পরাভূত করার জন্য যে ব্যক্তি জালিমকে সাহায্য করল সে মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হেফাজত-বহির্ভূত হয়ে গেল।’ ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে যারা জালিমকে সহায়তা করেছে, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে তারা ইসলামী অনুশাসনকেই লঙ্ঘন করেছে। আর সেজন্যই মহান আল্লাহ তাদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করেছেন লজ্জাজনক পরাজয়ের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সব শহীদের জন্য আমরা মহান আল্লাহর কৃপা কামনা করব। আল্লাহ তাদের জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় ঠাঁই দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন