মঙ্গলবার , ৯ অক্টোবর ২০১৮ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বিশ্বের যে ২০টি শহরে শত কোটিপতি বা বিলিওনেয়ার বসবাস করেন

Paris
অক্টোবর ৯, ২০১৮ ১১:৫৫ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আপনি যদি হং কং-এ থাকেন তাহলে হয়তো লি কা-শিং এর নাম শুনে থাকবেন। শুধু তাই নয়, আপনি হয়তো তাকে নিজের পকেট থেকে কিছু অর্থও দিয়েছেন।

নব্বই বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী বিশ্বের ২৩তম ধনী ব্যক্তি। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩,৮০০ কোটি ডলার।

মি. কা-শিং এর যেসব ব্যবসা রয়েছে তার মধ্যে আছে পরিবহন থেকে শুরু করে আর্থিক সেবা এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানী সরবরাহের মতো নানা ধরনের সার্ভিসও।

কিন্তু বহুজাতিক আর্থিক পরামর্শ দানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল্থ এক্স সম্প্রতি বিশ্বের শত কোটিপতি বা বিলিওনেয়ারদের ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছে। তারা বলছে, কা-শিং-ই হং কং এর একমাত্র শত কোটিপতি নন।

ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্টে তারা বলছে, বর্তমানে হং কং-ই বিশ্বের এমন একটি দেশ যেখানে নিউ ইয়র্কের পরেই সবচেয়ে বেশি বিলিওনেয়ার বসবাস করেন।

চীনে আলি বাবার প্রতিষ্ঠাতা লি মিয়া।

বর্তমানে এই শহরে থাকেন মোট ৯৩ জন বিলিওনেয়ার বা শত কোটিপতি যা ২০১৬ সালের তুলনায় ২১ জন বেশি।

জরিপে আরো দেখা গেছে, বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিলিওনেয়ার বসবাস করেন, সেরকম শীর্ষস্থানীয় ১০টি দেশের অর্ধেকই উন্নয়নশীল দেশের শহর।

আর এসব দেশেই সামাজিক বৈষম্য সবচেয়ে বেশি।

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, শত কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই বিশ্বে সম্পদের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

জরিপের রেকর্ডে দেখা যায় ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে যারা ১০০ কোটি ডলার বা তারচেয়েও বেশি পরিমাণ অর্থের মালিক, তাদের সংখ্যা ২,৭৫৪ জন।

তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন যা কীনা যৌথভাবে জার্মানি ও জাপানের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির চেয়েও বেশি।

যেসব শহরে সবচেয়ে বেশি বিলিওনেয়ার (সূত্র: ওয়েলথ-এক্স)
শহর ২০১৭ সালে বিলিওনেয়ার সংখ্যা ২০১৬ সালের পর বেড়েছে বা কমেছে
১. নিউ ইয়র্ক ১০৩ +১
২. হং কং ৯৩ +২১
৩. সান ফ্রান্সিসকো ৭৪ +১৪
৪. মস্কো ৬৯ -২
৫. লন্ডন ৬২
৬. বেইজিং ৫৭ +১৯
৭. সিঙ্গাপুর ৪৪ +৭
৮. দুবাই ৪০ +৩
৯. মুম্বাই ৩৯ +১০
১০. শেনজেন (চীন) ৩৯ +১৬
১১. লস অ্যাঞ্জেলেস ৩৮ +৬
১২. ইস্তাম্বুল ৩৬ +৮
১৩. সাও পাওলো ৩৩ +৪
১৪. হাংজু (চীন) ৩২ +১১
১৫. টোকিও ৩০ +৮
১৬. প্যারিস ২৯
১৭. রিয়াদ ২৬ +২
১৮. জেদ্দা ২৩ +১
১৯. শাংহাই ২৩ +৩
২০. মেক্সিকো সিটি ২১ +২

শত কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমাজে তার কী ধরনের প্রভাব পড়ছে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে।

একটি পক্ষ জোর দিচ্ছে এর ফলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার নৈতিকতার দিকটির ওপর।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফ্যাম তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, এই বৈষম্য দূর করতে হলে অতি-বিত্তশালী লোকদের আয়ের ওপর আরো বেশি করে কর ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।

কিন্তু আরেকটি পক্ষ বলছে, এই শত কোটিপতিরা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে এজেন্টের মতো ভূমিকা রাখছেন। অন্তত তাদের কেউ কেউ।

ভারতীয় ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি মুম্বাই শহরে ২৭ তলার এই ভবনটিতে থাকেন। কিন্তু এই শহরের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করেন বস্তিতে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ক্যারোলিন ফ্রয়েন্ড ২০১৬ সালে একটি বই লিখেছেন ‘ধনী ব্যক্তি: গরিব দেশ’ নামে।

বিবিসিকে তিনি বলেছেন: “সব ধনী ব্যক্তিকে একই চোখে দেখলে হবে না। একটা প্রবণতা আছে যে বিত্তশালীরা সম্পদের অপব্যবহার করে থাকেন। নানাভাবেই সম্পদ গড়ে তোলা যায়। আর সেই সম্পদ কী ধরনের তার ওপরেও নির্ভর করে সমাজে তার কী প্রভাব পড়তে পারে।”

তিনি আরো বলেন, যেসব বিলিওনেয়ার নিজের চেষ্টায় ধনী হয়েছেন, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তাদের কাছ থেকে অন্যরা লাভবান হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানার মাধ্যমে ধনী হয়েছেন তাদের মাধ্যমে সমাজে খুব একটা উপকার আসে না।”

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা সংক্রান্ত ম্যাগাজিন ফোর্বস বলছে, এই শত কোটিপতিরা এখন বিশ্বের ৭২টি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। চীন, ভারত এবং হং কং-এ তাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে।

এশিয়ার বিলিওনেয়ার ক্লাবে সদস্য সংখ্যা ৭৮৪। উত্তর অ্যামেরিকায় ৭২৭। এই প্রথম এশিয়ায় শত কোটিপতির সংখ্যা উত্তর আমেরিকার শত কোটিপতির সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চীনে ২০১৬ সালে মাত্র এক শতাংশ মানুষের কাছে যতো সম্পদ ছিল তার পরিমাণ দেশটির মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ।

আর ২৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষের কাছে ছিল মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ।

যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বিলিওনিয়ার (সূত্র: ওয়েলথ-এক্স)
দেশ বিলিওনেয়ারের সংখ্যা পরিবর্তন (%) ২০১৬-১৭ মোট সম্পদ ($ বিলিয়ন)
যুক্তরাষ্ট্র ৬৮০ ৯.৭% ৩১৬৭
চীন ৩৩৮ ৩৫.৭% ১০৮০
জার্মানি ১৫২ ১৭.৮% ৪৬৬
ভারত ১০৪ ২২.৪% ২৯৯
সুইটজারল্যান্ড ৯৯ ১৫.১% ২৬৫
রাশিয়া ৯৬ -৪.০% ৩৫১
হং কং ৯৩ ২৯.২% ৩১৫
যুক্তরাজ্য ৯০ -৪.৩% ২৫১
সৌদি আরব ৬২ ৮.৮% ১৬৯
সংযুক্ত আরব আমীরাত ৬২ ১৯.২% ১৬৮

আফ্রিকাতে বিলিওনেয়ারের সংখ্যা বর্তমানে ৪৪। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯,৩০০ কোটি ডলার।

বলা হচ্ছে, এসব ধনী ব্যক্তি যদি নিজেরা একটি দেশ গঠন করেন তাহলে তাদের দেশের জিডিপি হবে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের তালিকার আট নম্বরে।

তাদের মাথাপিছু আয়? “মাত্র” ২১১ কোটি ডলার।

কিন্তু আফ্রিকায় সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয় ২০১৭ সালে ছিল ১,৮২৫ ডলার।

ভারতেও বিত্তশালীদের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। নব্বই- এর দশকের মাঝামাঝি ফোর্বসে ধনীদের তালিকায় মাত্র দুজন ছিলেন ভারতীয়। কিন্তু ২০১৬ সালে এই তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে।

বিত্তশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের কতোটা উন্নতি হচ্ছে তা নিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন অভিমত।

কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ভারতে ২৮ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে।

অর্থনীতিবিদ ফ্রয়েন্ড বলছেন, “যেসব দেশের খুব বেশি সম্পদ নেই সেসব দেশে বিত্তশালী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, যারা কঠোর পরিশ্রম করে অল্প অর্থ উপার্জন করেন, তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু দরিদ্র দেশে ধনী মানুষ ও ধনী কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে সেটা ভালো অর্থনীতির ইঙ্গিত দেয়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জীবন-মানও উন্নত হয়।”

ফ্রয়েন্ড দেখিয়েছেন চীনের নির্মাণ শিল্পে বড় বড় কোম্পানি গড়ে ওঠার কারণে শ্রমিকদের গড় মজুরি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে।

এসব কোম্পানিতে কাজ করছে প্রচুর মানুষ। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য