বিশ্বনেতাদের খাস বাবুর্চিদের দিল্লি সামিট

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জি-সেভেন, জি-টোয়েন্টি, ই ইউ, আসিয়ান বা ব্রিকসের মতো শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মুখোমুখি দেখা হয় বছরে বেশ কয়েকবার। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত রাঁধুনিদেরও যে আলাদা একটা মঞ্চ আছে আর তারাও প্রতি বছর একটা সামিটে মিলিত হন – এবং নিজেদের রান্নাবান্নার গোপন কলাকৌশল নিয়ে মতের আদানপ্রদান করেন – সেটা ক’জন জানেন ?

 

আসলে এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে সেই ১৯৭৭ সাল থেকে, যখন প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ক্লাব দ্য শেফস দ্য শেফস’(Club des Chefs des Chefs )– অর্থাৎ কিনা বাবুর্চিদের সেরা বাবুর্চি যারা, তাদের নিজস্ব ও এক্সক্লুসিভ ক্লাব। প্রতি বছরই তারা বিশ্বের কোনও না কোনও রাজধানীতে মিলিত হন, আর এবারেই প্রথম তাদের সামিট বসেছিল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। এই বিশ্ববরেণ্য শেফদের এ সপ্তাহে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ব্যক্তিগত প্রধান রাঁধুনি ( হেড শেফ) মন্টু সাইনি।

.

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির হেড শেফ মন্টু সাহনি। দিল্লি শেফ সামিটের উদ্যোক্তাও তিনি।

তো কে ছিলেন না দুনিয়ার সেরা পাচকদের এই সম্মেলনে? মোট সতেরোজন বিশ্বনেতার শেফরা ছিলেন আমন্ত্রিত, তাদের মধ্যে ছিলেন হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামা-র শেফ ক্রিস্তেতা কমারফোর্ড, ইতালির প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত শেফ ফেব্রিজিও বোকা-র মতো হাই প্রোফাইল বহু রাঁধুনি। ছিলেন বার্নার্ড ভসোঁ, অন্তত ছজন ফরাসি প্রেসিডেন্ট যার হাতের রান্না চেটেপুটে খেয়েছেন। এখন অবসরে গেছেন ভসোঁ, আর সারা দুনিয়ার রান্না তারিয়ে তারিয়ে চাখছেন।

.

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে দ্য শেফস দ্য শেফস ক্লাবের পক্ষ থেকে শেফ এর পোশাক উপহার দেওয়া হয়

তো দিল্লিতে এসে এরা ভারতের রাজধানীর বিখ্যাত স্ট্রিট-ফুড ‘আলু টিক্কি’ বা ‘পানিপুরি’ (ফুচকা) চাখবেন না, তা কী করে হয়? কিন্তু দিল্লির জল বা ভাইরাস (দিল্লি-বেলি) বিদেশিদের পেটে খুব একটা সহ্য হয় না, তাই ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে তাদের কিচেনের ভেতরেই তৈরি করেছিল পথচলতি খাবারের পসরা।

.

দিল্লির চাঁদনি চক মার্কেট ঘুরে দেখছেন বিশ্বনেতাদের শেফরা (ছবি- ডেইলি সান ইন্ডিয়া)

তাদের সেই ভোজসভায় যোগ দিয়েছেন ভারতের বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণববাবু নিজেও–বিশ্বনেতাদের শেফরা তাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে উপহার দিয়েছেন শেফদের সাদা অ্যাপ্রনও।

 

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির শেফ মন্টু সাইনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘প্রতিবছর এই সামিটের রেওয়াজ হল যেখানে সম্মেলন হবে শেফরা একসঙ্গে গিয়ে সেই শহরের নিজস্ব খাবার নিজস্ব পরিবেশে চাখবেন। আমি আমাদের অতিথিদের নিয়ে গিয়ে দিল্লির খাবারের প্রধান তীর্থস্থান চাঁদনি চক ঘুরিয়ে এনেছি ঠিকই, কিন্তু ওখানে তাদের খাওয়ানোর ঝুঁকি নিতে পারিনি। কাজেই তাদের দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটাতে হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ভবনের কিচেনেই তাদের জন্য আলু টিক্কি তৈরি করেছি!’

.

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিশ্বনেতাদের শেফরা। মোদির বামে ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা গাইলস ব্রাগার্ডস।

এই এক্সক্লুসিভ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা গাইলস ব্রাগার্ডস অবশ্য তাতে অখুশি নন। ব্রাগার্ডস দিল্লিতে এসে বলছিলেন, ‘আমাদের ম্যাপে এতদিন দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশ কখনও ছিল না–কিন্তু দুনিয়ার খাবারের ল্যান্ডস্কেপে এই অঞ্চলের মশলা, এখানকার অবদান অপরিসীম। তাই দিল্লিতে আসতে পেরে আমরা সবাই ভীষণ এক্সাইটেড।’

.

হোয়াইট হাউজে ক্লাব দ্য শেফস দ্য শেফস এর সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

একটা গোপন তথ্য ফাঁস করার ভঙ্গিতে তিনি আরও জানাচ্ছেন, ‘রাজনীতি নেতাদের মধ্যে বিভক্তি আনে, কিন্তু দারুণ খাবার তাদের কিন্তু মিলিয়েও দেয়! (If politics devides people, a good table always gathers them) বহু সামিটে এমন হয়েছে নেতাদের বৈঠকে যে বিষয়টার মীমাংসা হচ্ছে না পরে ডিনারের টেবিলে বসে খাবারের ঘ্রাণে আর ওয়াইনের চুমুকে সে জটিলতা নিমেষে দূর হয়ে গেছে!’

 

‘ক্লাব দ্য শেফস দ্য শেফস’-য়ে আড়ি পেতে আরও জানা গেল বিশ্বনেতাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য যেমন আলাদা হটলাইন থাকে, তেমনি তাদের শেফরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিতে পারেন ‘ব্লু টেলিফোনে’র মাধ্যমে।

 

অর্থাৎ রুশ-মার্কিন সামিটের আগে বারাক ওবামা যেমন ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি যে কোনও সমস্যা নিয়ে কথা বলে নিতে পারেন, তেমনি তাদের রাঁধুনিরাও ‘ব্লু টেলিফোন’ ডায়াল করে পরস্পরের কাছে জেনে নিতে পারেন তাদের বসদের পছন্দ-অপছন্দ, কিংবা কোন খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদি ইত্যাদি।

.

দিল্লিতে রান্নার একটি পর্ব পর্যবেক্ষণ করছেন বিশ্বনেতাদের শেফরা (ছবি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

অক্টোবরে শেষ সপ্তাহে দিল্লি তাই সাক্ষী রয়ে গেল দুনিয়ার এমনই সব ক্ষমতাশালী আর প্রতিভাবান শেফদের এক বিরল সামিটের!

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন