রাসিক নির্বাচন-২০২৩

বিরামহীন লিটন, অন্যরা নেই মাঠে, শরীর দল নিয়ে বৈঠকে বসছে আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন একাই মাঠ দখল করে বসে আছেন বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। এমনকি নির্বাচন করবেন এমন ঘোষণাও শোনা যায়নি।

বিশেষ করে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে স্থানীয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেওয়ায় রাজশাহীতে এর অনেকটা প্রভাব পড়েছে এবার। নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে দলটির সাবেক দুই মেয়র বা রাজশাহী মহানগর বিএনপির অন্য কোনো নেতার নামও এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। তবে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিলেও তাদেরও কাউকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।

এতে করে যেন ফাঁকা মাঠে একাই বিরামহীনভাবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে দৌড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরই মধ্যে গত বুধবার থেকে লিটনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণাও শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন মেয়র প্রার্থী লিটন। আগামী ২ মে তিনি শরীক দল ১৪ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন। সেদিক থেকেও পিছিয়ে অন্য প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, আগামী ২১জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ লক্ষে ঘর গুছানোর কাজ শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে নির্বাচনী ভাবনা শুরু করে দিয়েছে। বলা যায়, রাসিক নির্বাচনী মাঠ এখন পুরোপুরো আওয়ামী লীগের দখলে। সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিতর্কিত অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কারণে শুধু তাঁেক এখন পর্যন্ত লিটনের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামতে দেখা যায়নি।

এর বাইরে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন একাট্টা হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে এরই মধ্যে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী কমিটি করা হচ্ছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। মেয়র লিটনের নামে ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার ফেস্টুনেও ছেয়ে দেওয়া হয়েছে গোটা শহর। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ১৩ থেকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ অডিটোরিয়ামে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

এদিকে, ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়া বিএনপির কোনো নেতাকে প্রকাশ্য কোনো তৎপরতা চালাতে এখনো দেখা যায়নি। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বরাবরের মতোই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। ভোটে না যাওয়ার ঘোষণায় এবং কোনো তৎপরতা না থাকায় বিএনপির তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাও ঝুঁকছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর দিকে বা কাউন্সিলর প্রার্থীর দিকে।

অন্যদিকে ১৯ এপ্রিল রাজশাহী সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। রাসিক নির্বাচনে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করে রাজশাহী মহানগর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। মাওলানা ফারুকী পেশায় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ও একটি মসজিদের ইমাম। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট। তবে তিনি সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের ভোটার। তবে এখ নপর্যন্ত তাকেও ভোটের মাঠে নামতে দেখা যায়নি।

মাওলানা ফারুকী বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে হাতপাখা বিজয়ী হবে। গত নির্বাচন আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল। এবার অনেক বেশি ভোট পাবো ইনশাআল্লাহ’।

অপরদিকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেও এখনো মাঠে নামেননি জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে আমাকেই মেয়রপ্রার্থী হতে বলা হয়েছে। কিন্তু ভোট সুষ্ঠু হবে কি না- এ নিয়ে আমি সন্দিহান। শুধু শুধু টাকা খরচ করে লাভ নেই। ভোট সুষ্ঠু হওয়ার মতো পরিবেশ দেখলে অমি ভোট করবো। না হলে নাই’।

এদিকে, বিএনপির নিশ্চুপ অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন শওকত বলেন, ‘দল পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছে ইলেকশন করবে না। কাজেই সিটি ইলেকশন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। বিএনপি নির্বাচনমুখি দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতের নির্বাচনগুলোতে কোনো কম্পিটিশন হয় নি। জনগণ ভোট দিতে পারে নি। এখন ভোট দেয়ার আগ্রহও নেই ভোটারদের। কারণ তারা জানে, রায় কী হবে। কাজেই ভাবনা একটিই। তা হলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর সে লক্ষেই লড়ে যাচ্ছে বিএনপি’।

আওয়ামী লীগের নৌকার প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমরা জনগণ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। পাঁচ বছর পর পর জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনছি। সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। জনগণ নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছে তাদের কী কী উন্নয়ন হলো। যারা উন্নয়ন চায় না, দেশকে পিছিয়ে দিতে চায়- তারাই নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা জনগণকে ভয় পায়। তাদের জন্য তো আর নির্বাচন বসেও থাকবে না। তবে আমি চাই সব দলই নির্বাচনে আসুক। আমরা সবার সাথেই খেলতে চাই। কাউকেই ছোট করে দেখছি না’।

তিনি আরও বলেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণার আগ থেকেই আমি রাসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে সেটিকে আরও জোরদার করেছি। প্রতিদিন নিজ দল এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। আগামী ২ তারিখ ১৪ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসবো। আমরা এবারও সবাইকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামবো।’