বিমানে সীমাহীন অনিয়ম: ফলপ্রসূ হোক দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব শাখার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এটি স্বস্তিদায়ক।

এর অংশ হিসেবে এ সংস্থার দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্র ও গডফাদারদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ চক্রের সদস্যদের তালিকাসহ দুর্নীতির দলিল-দস্তাবেজ ও তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। জানা গেছে, দুদক ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

প্রাথমিক অবস্থায় বিমানের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগ, কার্গো শাখা ও প্রকৌশল শাখার দুর্নীতির তদন্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শাখাকেও আনা হবে তদন্তের আওতায়।

দুর্নীতির কারণে বিমানের বেহাল দশার কথা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। সম্প্রতি সংস্থাটির ৮ খাতে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতি হচ্ছে। বিমানের অসাধু কর্মকর্তা এবং বোর্ডের অসৎ পরিচালকরা এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বিমানের যেসব খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- এয়ারক্রাফট কেনা ও লিজ নেয়া, রক্ষণাবেক্ষণ, ওভারহোলিং, গ্রাউন্ড সার্ভিস, কার্গো আমদানি-রফতানি, টিকিট বিক্রি, ক্যাটারিং ইত্যাদি। সম্প্রতি টিকিট ও কার্গো কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর মার্কেটিং ও কার্গো শাখার দুর্নীতিবাজদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

বস্তুত সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিমানকে প্রতি বছর বিপুল অংকের অর্থ লোকসান দিতে হচ্ছে। সেবার মানও হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ।

সেবার মান বৃদ্ধির কোনো প্রয়াসও নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে পারতপক্ষে কেউ বিমানের উড়োজাহাজে চড়তে চান না এখন। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই।

এদিক থেকে বিমানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতি এ সংস্থাটির পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিমানের পিছিয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ।

অতীতে জনবল কমিয়ে আনা এবং বিদেশিদের সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ বিমানকে দুর্নীতিমুক্ত করার নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

তাই দাবি উঠেছে বিমানকে গতিশীল করতে একটি পেশাদার পরিচালনা পর্ষদ গঠনের। এ লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য। বিমানকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করার সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। এসব বিষয় খাটো করে দেখার ন্যূনতম সুযোগ নেই।

ইতিপূর্বে বিমান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক ১৯ দফা সুপারিশ করেছিল। সুপারিশনামায় বলা হয়েছে, দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অতীতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান বড় অসঙ্গতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এযাবৎকালের অডিট আপত্তিগুলো গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়া আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা আশা করব, দুদকের সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে অবিলম্বে দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় পতাকাবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান দুর্নীতিমুক্ত হয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক, উন্নতি হোক সংস্থাটির ভাবমূর্তির, এটাই কাম্য।