বিপৎসীমার আরো কাছে পদ্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভারতীয় সীমান্তে ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ায় বিপৎসীমার আরো কাছে এসে পৌঁছেছে পদ্মার পানি। রাজশাহীতে আজ শনিবার দুপুর ১২টায় পদ্মায় বিপৎসীমার মাত্র ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

 

এ সময় পদ্মায় পানি প্রবাহের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার। যা সকালে ছিল ১৮ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার। আগের দিন শুক্রবার বিকেল ছয়টায় পদ্মায় পানি প্রবাহের মাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। সেই হিসেবে ১৮ ঘন্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পায় ৮ সেন্টিমিটার।

 

এদিকে ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে আশঙ্কাজনক হারে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করায়   রাজশাহীর নিম্নাঞ্চলগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। দেখা দিচ্ছে বন্যা।

 

এরই মধ্যে রাজশাহীর পবার, মাঝ চর, চার খানপুর, খিদিরপুর, বাঘার চর আতারপুর, চর লক্ষীপুর, চর নারায়নপুরসহ ১৫টি চর ডুবে গেছে পানিতে। এসব এলাকায় বানভাসি মানুষদের মাঝে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পায় সব মিলিয়ে ৪৫ সেন্টিমিটার। এর ফলে পদ্মায় বিপৎসীমার এখন ২০ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

 

  • গতকাল  শুক্রবার দুপুরে পদ্মায় রাজশাহীতে পানি প্রবাহের মাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। যা সন্ধ্যায় গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। অথচ সকাল ছয়টায় ছিল ১৮ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার।

 

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান জানান, ‘এখন বর্ষা কাল। সেই হিসেবে পদ্মায় স্বাভাবিক হারেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মাঝে কয়েকদিন পানি কমে গিয়েছিল। এখন আবার সেটি বাড়ছে এটা ঠিক। বর্ষাকালে এমনটি হতেই পারে। তবে ফারাক্কা বাঁধের গেট ছেড়ে দেওয়ার কারণেও পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এ নিয়ে কোনো আশঙ্কার কিছু নাই বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

 

  • গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টায় সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার এবং দুপুর দুইটার দিকে পহেটি হয় ১৮ দশমিদক ৩০ সেন্টিমিটার। মন্ধ্যা ছয়টায় সেটি গিয়ে ঠেকে ১৮ দশকি ৩১ সেন্টিমিটারে। আজ শনিবার সকালে আরো বৃদ্ধি পায় পানি। এর ফলে পদ্মা বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমার থেকে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এদিকে বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ভারতের বন্যার কারণে বিহার অঞ্চলে দুই লাখ মানুষের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে ফারাক্কা বাঁধের মাত্র ৪টি গেট বাদে বাকি ১০০টি গেটই খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রভাবে পদ্মায় বাংলাদেশ অঞ্চলে ব্যাপক পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে করে বন্যা আতঙ্কও দেখা দিয়েছে পদ্মা তীরবর্তি মানুষের মাঝে।

  • এরই মধ্যে রাজশাহী নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের দিকে পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধ পড়েছে নতুন করে হুমকির মুখে। বাধ ঠেকাতে আবার নতুন করে বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে। নগরীর পূর্বাঞ্চলের কাজলা ও তালাইমারী এলাকার নিম্নাচলগুলো বেশকিছু বাড়ি-ঘর এরই মধ্যে তলিয়েও গেছে।

 

পানি বৃদ্ধি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রমের পাশাপাশি নিম্নাচলগুলো আরো বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসীন্দা নাসিম আলী বলেন, এরই মধ্যে তার বাড়ি এক হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে আশেপাশের লোকজনের বাড়ি-ঘরও দ্রুত ডুবে যাবে। আবার বাধও হুমকির মধ্যে পড়বে। পানির তোড়ে বাধ ভেঙে গেলে গোটা রাজশাহী নগরীসহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে যাবে বলেও দাবি করেছেন অনেকেই।

স/আর