বিপরীত কৌশলে বিএনপি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে, এর পূর্বাপর সময়ে দু’দফা সরকারবিরোধী প্রাণঘাতী আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি এবার ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ দাবি আদায় করতে চায়।

একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে সাংঘার্ষিক রাজনীতি এড়িয়ে এই বিপরীত কৌশল নিয়েছে দলটি।

এ জন্য ‘অরাজকতা, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা’ পরিহার করে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কথা বলা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের এমন ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির একাধিক সূত্রও সেটি জানাচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শনিবার বলেন, বিএনপি সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পক্ষে। এখনো সেই পথে আছে।

‘বিএনপি একাটি উদার মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল। সেই হিসাবে আমরা কখনো সংঘাতময় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।

মারামারি, কাটাকাটি করে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি বিএনপি করে না। একটি মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি তার নীতিতেই আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’

দলীয় সূত্র বলছে, মামলা-গ্রেপ্তারে দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মী চাপের মধ্যে আছে। নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলনের পর থেকে মূলত দল গোছাতে এবং মামলা মোকাবেলা করতেই সময় গেছে বিএনপির।

এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা অসংখ্য মামলায় লড়ছেন। যতই সময় গড়িয়েছে মামলার সংখ্যা বেড়েছে সেই অনুপাতে।

দলটির নেতারা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকার আগাম নির্বাচন দিতে পারে। কারণ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাগুলোতে সরকার ‘তাড়াহুড়া’ করছে।

মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সরকার নির্বাচনের আয়োজনের পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। এতে বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনের অযোগ্য হতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে একাদশতম নির্বাচনের আগের এই সময়ে বিএনপির রাজনীতি এবং দলের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ রাখতে চায় দলটি।

এ বিষয়ে বিএনপির একজন নেতার ভাষ্য হচ্ছে, রাজনীতির মাঠ যত অস্থিতিশীল হবে সরকার তত বেশি সুযোগ নেবে। সেজন্য সরকার একের পর এক ইস্যু সামনে আনছে। সরকার চাচ্ছে মামলাগুলোকে কেন্দ্র করে বিএনপি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করুক।

কিন্তু দল এই ফাঁদে পা দেবে না। সেজন্য বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় কঠিন সময় এলেও কেন্দ্রের নির্দেশনা ছাড়া পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার কথা বলা হয়েছে।

তবে দুর্নীতির মামলায় দলটির প্রাণভোমরা খালেদা জিয়ার সাজা হলে সেক্ষেত্রে বিএনপির প্রতিক্রিয়া শান্তিপূর্ণ থাকবে কি না- সেই বিষয়ে তিনি বলেন, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে দলের হাইকমান্ড। এ সময় তারেক রহমানের সাজার রায়ের পরেও নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন ওই নেতা।

সম্প্রতি অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি হয়, এমন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে বিক্ষোভ কমসূচির মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও অরাজকতা, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে ধৈর্য্য ধরে, আমাদের সাহস নিয়ে এবং কোনো অরাজকতা, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা নয়, যা নির্দেশ দেওয়া হবে, সেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সব কিছু মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাব। ইনশাল্লাহ, সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাবে এবং এই দেশে হারানো গণতন্ত্র আবার ফিরে আসবে।’

দলের একটি সূত্র বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর বেশ চাঙ্গা মুডে রয়েছে দলটি।

কেরির আগে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ায় বেশ অস্বস্তিতে ছিল বিএনপি। জন কেরির সঙ্গে বৈঠকে সেই অস্বস্তি কাটার সঙ্গে সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ সবকিছু মোকাবিলার কথা বলা হচ্ছে দলে।

সূত্র বলছে, কেরির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে আগামী একাদশতম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, বিএনপির নির্বাচনের অংশগ্রহণসহ আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি না করার পরামর্শ দেন। আর আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক সেটিও যুক্তরাষ্ট্র চায় বলে জানান তিনি।

জন কেরির সঙ্গে খালেদা জিয়ার ওই বৈঠককে বর্তমান রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখতে চাইছেন বিএনপি নেতারা। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের গতি, প্রকৃতি এবং নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

 

 

 

সূত্র: রাইজিংবিডি