বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিলেই ব্যবস্থা : তথ্যমন্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিদেশি টিভি চ্যানেলে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ১ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এজন্য এরই মধ্যে দু’বার পরিপত্র জারি করা হয়েছে। শনিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘সংকটে বেসরকারি টেলিভিশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র (বিজেসি)। সংগঠনের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, টিভি চ্যানেল ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, স্কাইপি ক্যাবলের চেয়ারম্যান নূরুল আলম, চ্যানেল নাইনের সিইও নূরুল ইসলাম খসরু, সংগঠনের ট্রাস্টি সদস্য নূর জুলহাস ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আক্তার হোসেন, শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, বেঙ্গল গ্রুপ, একাত্তর টিভির মার্কেটিং প্রধান রাশেদ আহসান, বাংলাদেশ ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক বিপ্লব প্রমুখ।

ডিস্ট্রিবিউটরদের সহযোগিতা কামনা করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, আশা করি, এ বিষয়ে এরই মধ্যে আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। কারণ দুই মাস আগে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ৪৪টি টেলিভিশনকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি সম্প্রচারে রয়েছে। অন্যগুলোও সম্প্রচারের অপেক্ষায়। আমাদের দেশে চ্যানেলের সংখ্যা কলকতার চেয়ে অনেক বেশি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেন টিকে থাকে, চ্যানেলে যারা চাকরি করে তাদের চাকরির যেন নিশ্চয়তা থাকে- এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

এজন্য চ্যানেলগুলোর আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, টেলিভিশনগুলো এখনও বিজ্ঞাপননির্ভর। কিন্তু দেশে বিজ্ঞাপনের মার্কেট কমে যাচ্ছে। অপরদিকে, টেলিভিশনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। টেলিভিশনগুলো নিজেরাও অসম প্রতিযোগিতা করে বিজ্ঞাপনের রেট কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনলাইন, ফেসবুক, ইউটিউবেও বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে।

এসব সমস্যার বড় সমাধান ডিস্ট্রিবিউটরদের হাতে রয়েছে। কারণ, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত সব বিদেশি টিভি চ্যানেলে দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এরপরও বাংলাদেশে যেসব বিদেশি চ্যানেল জনপ্রিয়, সেগুলোয় বহুজাতিক ও বেশকিছু বাংলাদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপন অবৈধভাবে প্রচার করা হয়।

আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলে বছরে ৫০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেশীয় টেলিভিশনগুলো পাবে বলে আমি মনে করি। এ পরিমাণ বিজ্ঞাপন পেলে আমাদের টেলিভিশনগুলোর সংকট কেটে যাবে।

ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ক্যাবল অপারেটররা লাইন দিয়ে যে টাকা আয় করে, সেখান থেকে একটা অংশ টেলিভিশন মালিকদের দেয়া যায় কি না, সে বিষয়টি খুঁজে বের করা হচ্ছে। এজন্য ক্যাবল অপারেটর ও টেলিভিশন মালিকদের বসে একটি প্রস্তাব তৈরির পরার্মশ দেন তথ্যমন্ত্রী।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি টিভি চ্যানেল করতে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লাগে। টিভি মালিকরা লাভ করার মানসিকতা নিয়ে সবাই এসেছেন তা নয়। তবে এটার মাধ্যমে খরচটা উঠে আসুক, এটাই তারা চান। তাই এ শিল্পকে বাঁচানোর স্বার্থে সবাই সহযোগিতা করবেন। ক্যাবল অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তিন কোটি টিভি থেকে রেভিনিউ আসে। কিছুটা শেয়ার হলে টিভি চ্যানেলগুলো টিকে থাকবে এবং সাংবাদিকদের চাকরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, সবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ এসেছে আইপি টিভি। সেটির কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি। আমি বিষয়টিকে তদন্ত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে বলেছি।

তিনি বলেন, কেউ ৩০ কোটি টাকা খরচ করে চ্যানেল করবেন আর কেউ ১০ লাখ টাকায় চ্যানেল চালু করে দেবেন, এটা ঠিক না। আমরা এটির অনুমোদন দেব না তা নয়, এর জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। আর নীতিমালা প্রণয়নে এরই মধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ শিল্পকে সুরক্ষা দিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মুনাফায় একটু ছাড় দিয়ে হলেও সবাইকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বর্তমানে বেসরকারি টেলিভিশনগুলো নানা সংকটে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অপ্রত্যাশিতভাবে অনেকে কর্মহীন হয়ে যাচ্ছেন।

কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল আর্থিক ক্ষতির দোহাই দিয়ে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে শুধু একটি নোটিশ দিয়ে বার্তাকক্ষ গুটিয়ে ফেলছে। কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই সাংবাদিক ও কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। আবার ছদ্মবেকারও আছে অনেক। কারণ চাকরি আছে, বেতন নেই। কোনো কোনো চ্যানেল কর্তৃপক্ষ মাসের পর মাস সাংবাদিক ও কর্মীদের বেতন দেন না।

কোনো কোনো চ্যানেল আবার বেতন কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের দরপতন হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে দেশীয় চ্যানেলগুলো আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছে।

ইশতিয়াক রেজা আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম সংকটে রয়েছে। গণতন্ত্রকে সংহত করতে গণমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগ চাই। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন গঠনের তাগিদ দেন।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, সামনের চিত্র ভয়াবহ। রেভিনিউ কমে আসছে। কীভাবে ওভারহেট কমানো যায়, এগুলো নিয়ে সবাইকে ভাবতে হচ্ছে। কারণ ব্যক্তির স্বার্থের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বড়। বিদেশি চ্যানেলে আমাদের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে সোচ্চার হতে হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিটি চ্যানেলে শক্তিশালী ইউনিট গড়ে উঠুক।

টিভি চ্যানেল ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধ হলে বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা যোগ হবে। সংকট সমাধানে এটি কাজে আসবে।