বিদায়েও রাঙালেন কুক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বল ঠেলে ছুটলেন রানের জন্য। এক রানই হয় তাতে, ৯৬ থেকে ৯৭ রানে পৌঁছবেন। কিন্তু ভারতীয় ফিল্ডার রান আউটের চেষ্টায় থ্রো করে বসেন, যা স্টাম্পের ধারকাছ দিয়েও যায়নি।

উল্টো বল গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় বাউন্ডারি সীমানার ওপারে। অ্যালিস্টার কুকের বিদায়টা আলোর ঝরনাধারায় ঝলসে ওঠে তাতেই। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে, শেষ ইনিংসে যে সেঞ্চুরি হয়ে গেল এই কিংবদন্তির!

এরপর? ওভালের ভরা গ্যালারির দর্শকদের অভিবাদন যেন শেষ হয় না। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে; সবাই হাততালিতে ব্যস্ত। দুই সন্তানসহ তাঁর স্ত্রীও সেই জনারণ্যে। হেলমেট খুলে, ব্যাট উঁচিয়ে অভিনন্দনের জবাব দেন কুক। ব্যাটিং সঙ্গী জো রুট এসে ধরেন জড়িয়ে। ফিসফিসিয়ে বলেনও হয়তো-বা, ‘তোমার মতো কিংবদন্তির এমন বিদায়ই প্রাপ্য।’

কুকের বিদায়ী টেস্টে চালকের আসনে ইংল্যান্ড। এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের সংগ্রহ ছয় উইকেটে ৩৭৩। প্রথম ইনিংসের ৪০ রানের অগ্রগামিতা যোগ করে সাকল্যে এখন ভারতের চেয়ে ৪১৩ রানে এগিয়ে স্বাগতিকরা। ভারতের জন্য এই টেস্ট বাঁচানোটা কঠিনই বটে!

তবে সিরিজের ফল যেহেতু আগেই নির্ধারিত, সে কারণে ওভাল টেস্টটি শুধুই ‘কুকের বিদায়ী ম্যাচ’। সে বিদায়টা কত অন্য রকম হওয়ার আশঙ্কাই না ছিল! ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম চার টেস্টে ব্যাটে কুকের রানখরা। ১৩, ০, ২১, ২৯, ১৭, ১৭ ও ১২—এই ছিল তাঁর ইনিংসগুলো। সাউদাম্পটন টেস্টের পর হুট করেই ঘোষণা দেন, ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টই হবে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। হলেনই-বা তিনি ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে টেস্টে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, হলোই-বা তাঁর বয়স মোটে ৩৩ আর যোগ্য কোনো উত্তরসূরি না থাকা—তবু বিদায়ের সিদ্ধান্ত নেন কুক।

রানখরায় থাকা এই ওপেনারের বিদায়ে করুণ সুর বাজছিল। শেষ টেস্টে তা তিনি বদলে দেন দারুণ ঝঙ্কারে। প্রথম ইনিংসে ৭১ রান করলেও সেঞ্চুরি না পাওয়ার হাহাকার না পুড়িয়ে পারে না। দ্বিতীয় ইনিংসে আর আক্ষেপের কোনো অবকাশ রাখলেন না। ঠিকই করলেন সেঞ্চুরি। এক যুগ আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরিতে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টেও তাই। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু-শেষের এমন কীর্তি কুকের। আর প্রথম ও শেষ টেস্টে সেঞ্চুরিয়ানদের অভিজাত তালিকায় তিনি পঞ্চম সংযোজন। অস্ট্রেলিয়ার রেজিনাল্ড ডাফ, বিল পন্সফোর্ড, গ্রেগ চ্যাপেল ও ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সঙ্গী এখন কুক। আর জীবনের শেষ ইনিংসে কুমার সাঙ্গাকারাকে পেছনে ঠেলে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে পাঁচ নম্বরেও উঠে আসেন তিনি। সামনে রয়ে গেলেন শুধু শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস ও রাহুল দ্রাবিড়। তাঁদের সবাই ডানহাতি বলে বাঁহাতিদের মধ্যে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ডটিও সাঙ্গাকারার কাছ থেকে কেড়ে নিলেন কুক।

দিন শুরু করেছিলেন তিনি ৪৬ রান নিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের রান দুই উইকেটে ১১৪। জো রুটের সঙ্গে আগের বিকেলে জমে ওঠা জুটি কালও এগিয়ে নেন কুক স্বচ্ছন্দে। ভারতীয় বোলারদের মরিয়া চেষ্টায় কাজ হয়নি। ৭৬ রানে পৌঁছে সাঙ্গাকারাকে পেছনে ফেলেন আগে। এরপর নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে বাউন্ডারি। ৯৬ রানের সময় সিঙ্গেলটা যখন ওভার থ্রোতে বাউন্ডারি হয়ে যায়—অমরত্ব নিশ্চিত হয়ে যায় কুকের। যে ইনিংস দেখার পর সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনের প্রতিক্রিয়া, ‘এটি ছিল খুব বিশেষ মুহূর্ত। আজ আমাদের যাদের এখানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে, তারা তা কোনোদিন ভুলব না। কারো যদি এমন বিদায় প্রাপ্য, সেটি অ্যালিস্টার কুকের। রূপকথা তাহলে বাস্তবেও ঘটে।’ ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের টুইট, ‘শেষ ইনিংসে সেঞ্চুরি। এরপর দর্শকদের দাঁড়িয়ে হাততালিতে অভিনন্দন, যা মনে হচ্ছিল শেষ হবে না। অ্যালিস্টার কুকের জন্য কী অবিশ্বাস্য মুহূর্ত!’ আর সাবেক ফুটবলার হয়েও ক্রিকেটের ভীষণ ভক্ত জেমি ক্যারাগারের উচ্ছ্বাস, ‘দারুণ সেঞ্চুরি অ্যালিস্টার কুক। কী দারুণ বিদায়!’

বিদায়টা আক্ষরিক অর্থে ক্রিজ থেকে বিদায় হয়েছে ১৪৭ রান করার পর। হনুমা বিহারীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ঠিক আগের বলে ২৫৯ রানের জুটি ভেঙে বিদায় সেঞ্চুরিয়ান রুটের (১২৫)। তবে এসব কেবলই যেন চিত্রনাট্যের পার্শ্বচরিত্র। মূল চরিত্রে ৩৩ বছর বয়সে ৩৩তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে বিদায়টা রাঙিয়ে দেওয়া অ্যালিস্টার কুকই।