‘বিজয় দিবস চিরগৌরবের’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 ‘বিজয় দিবস চিরগৌরবের’

বর্তমানে পৃথিবীতে অনেক দিবস আছে। কিছু কিছু অন্যতম দিবস রয়েছে যা সহজেই ভুলা যায় না। তেমনি একটি দিবস ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালির জাতি এই দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষায় কাটিয়েছে। ৯ মাস তান্ডব লীলাখেলা ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয় পায়। আজ বাঙালি জাতির বিজয়ের দিন, আনন্দের দিন। বিজয় দিবস চিরগৌরবের। বাঙালির বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে আনুমানিক সাড়ে চার টায় পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় ৯১,৬৩৪ জন সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে লড়াকু বাঙালিদের কাছে পরাজয় মেনে নেয়। স্বাক্ষর করে পরাজয়ের সনদে। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের। এই দিনে বিজয়ের আনন্দে বয়ে যায় সারা দেশে। তবে এই বিজয়ের বাঙালিকে অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে। দেশের মাটি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শহীদদের রক্তে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার ধারা হয়েছিল রক্তিম। আজ বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হবে ।

বাঙালি জাতির অনেক আগে থেকেই শোষিত হয়ে আসছিলেন। দুইশত বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেসিক শাসনের অসান ঘটলে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয় দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। দীর্ঘ এতবছর ব্রিটিশদের কাছ থেকে শোষিত হওয়ার পরেও মুক্তি মেলেনি বাঙালির। তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তানিরা অমানবিক অত্যাচার আর জুলুম চালাতে লাগে নিরীহ বাঙ্গালির উপর। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহ সকল ভাবেই দমিয়ে রেখেছিলো। অতঃপর তারা মাতৃভাষা বাংলার প্রতি কু-দৃষ্টি দেয়। সেজন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে রাজপথে নামে ছাত্র সমাজ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এর দাবীতে প্রত্যেকের হাতে একটি করে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উদ্ভব ঘটে স্বাধীকার আন্দোলনের। একপর্যায়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। বাঙালিকে একত্র করে তাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ বিজয়ী হলেও ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অতঃপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে সম্মুখে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এর মধ্যে দিয়েই বজ্রশাক্তিতে দৃঢ় হয়েছিল বাঙালির বাহু। নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করে বীর রণক্ষেত্রের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়ে যাত্র শুরু করেছিলো বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি প্রাণপন দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায় পাশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতিহত করতে। রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের মতো মানুষরুপী জঘন্য অমানুষেরা পাকিস্তানিদের দালালী করে এদেশের অনেক নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও তারা বুদ্ধিজীবীদের অমানবিক হত্যকান্ড চালিয়েছিল। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিল অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ, লেখক, কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ আরো অনেক পেশাদার শ্রেণির মানুষ। যখন পাকিস্তানিরা বুঝতে পারল যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখনই তারা এই হত্যকান্ড শুরু করল। অবশেষে এই দিনে তারা পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে আত্মসমর্পণ করল। বিজয়ী হলো বাঙালি জাতি।

বিশ্বের ইতিহাসে কোন ভাষণ কোন দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে পারেনি। কিন্তু সেই ৭ মার্চের ভাষণের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বিজয়ী হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধুর জন্যই আমরা আজকে পেয়েছি স্বাধীন দেশ। তাই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। প্রায় ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন দেশ। বিজয়ের দিনে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যরা যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পথভ্রষ্টদের হাতে শহিদ হয়েছেন তাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে যারা আত্মবিসর্জন দিয়েছেন তাদের প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: মনিরুজ্জামান শেখ রাহুল