বিজয়ের মালিক একমাত্র আল্লাহ

প্রতিটি বিজয় মহান আল্লাহর ইচ্ছায় অর্জিত হয়। অন্যায়কারীদের সঙ্গে ন্যায়ের পক্ষের যুদ্ধে সর্বদাই ন্যায়ের জয় হয়। অন্যায়কারীদের পরাজয় হয়। আল কোরআনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা বিজয় সম্পর্কে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ ৪৮:১।

হুদায়বিয়ার সন্ধির পর উপরোক্ত আয়াতটি নাজিল হয়। মুমিনদের অনেকেই এ সন্ধির যথার্থতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। আল্লাহ সে সংশয় নিরসনে বিজয়ের আগাম বার্তা দেন। ওই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে আল্লাহই বিজয় দানের মালিক। বিজয় অর্জনে তাঁর রহমতের ওপর ভরসা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে এক পক্ষে ছিল বাংলাদেশের মজলুম জনগণ। আরেক পক্ষে ছিল জবরদখলকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে এ-দেশি ঘাতক-দালাল নিয়ে গঠিত বিভিন্ন বাহিনী, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বনকারী মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত। তাদের হত্যা করত। সম্পদ লুটপাট ও সম্ভ্রমহানি করত। জ্বালিয়ে দিত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ। মসজিদ, মন্দিরও তাদের জিঘাংসা থেকে রক্ষা পায়নি। অথচ ধর্মের নামে তারা এ দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

কোরআনে ভ–প্রতারকদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি, অথচ আদৌ তারা ইমানদার নয়।’ সুরা বাকারা আয়াত ৮।

ইসলামে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের রক্ত ঝরাবে এমন সংঘাতকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের ধিক্কার দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তাদের (কপট বিশ্বাসীদের) বলা হয় যে দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি কোর না। তখন তারা বলে আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করছি। মনে রেখ তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।’ সুরা বাকারা আয়াত ১১-১২।

ইসলাম যুদ্ধবিগ্রহের সময়ও নিরপরাধ শিশু ও নারী হত্যা, তাদের বাড়িঘর বৃক্ষসম্পদ জ্বালিয়ে দেওয়া অনুমোদন করে না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ-দেশি সহযোগী রাজাকার- আলবদর-আলশামস বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালে ইসলামী বিধান লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষকে হত্যা, নারীর সম্ভ্রম লুট ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার অপরাধে জড়িত ছিল বলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের পরাজয় ও মজলুমের প্রতিনিধিত্বকারী মুক্তিবাহিনীর বিজয় নিশ্চিত হয়। আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মাগফিরাত কামনা করি। আমাদের স্বাধীনতার সুরক্ষা ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর সহায়তা কামনা করি।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন