বিএমডিএ: স্ট্যান্ডরিলিজ করা ৮ প্রকৌশলীকে মন্ত্রীর নির্দেশে পুনর্বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) স্ট্যান্ডরিলিজ করা আট প্রকৌশলীকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। স্ট্যান্ডরিলিজ আদেশের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা বাতিল করে তাদের পুনর্বহাল করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে ফোন করে স্ট্যান্ডরিলিজ আদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন কৃষিমন্ত্রী।

বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান,  বৃহস্পতিবার  প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই আট কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছিল। কিন্তু রোববার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই ওই আদেশ স্থগিত হয়েছে।

ফলে তারা আগের পদেই পুনর্বহাল থাকলেন। আর আট প্রকৌশলীকে স্ট্যান্ডরিলিজের কারণ দুর্নীতি বলে প্রচার হলেও তা সত্য নয়। প্রশাসনিক বদলিজনিত কারণে তাদের স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন নির্বাহী পরিচালক।

পুনর্বহাল হওয়ায় ওই আট কর্মকর্তা হলেন, বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হোদা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. আবুল কাশেম, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ, নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) তরিকুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, জয়পুরহাট রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাক, রাজশাহীর পবা জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাহাত পারভেজ ও দুর্গাপুর জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শামসুল আলম।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএমডিএ কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তারা অভিযোগ তদন্ত শুরু করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা ওই দফতরে অবস্থান করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চালান। পরে সাত কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পান। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করে তারা দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠান।

এদিকে, ওইদিন বিকেলে বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী এক আদেশে এই আট কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ডরিলিজ করেন। ওই আদেশ অনুযায়ী আজকের মধ্যেই তাদেরকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।তবে কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই স্ট্যান্ডরিলিজ বাতিল করে তাদের পুনর্বহাল করা হয়।

উল্লেখ্য, বিএমডিএ’র বাণিজ্যিক অডিট শাখা পরিচালিত ২০১২-১৭ সাল পর্যন্ত অডিটে যেসব অনিয়মের চিত্র উঠে আসে তার মধ্যে রয়েছে, কর্তৃপক্ষের জোন পর্যায়ের ভবনের তৃতীয় তলা সহকারী প্রকৌশলীদের আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হলেও তা বরাদ্দ না দিয়ে ফেলে রাখার ফলে সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৩ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে কর্মকর্তাদের টাইমস্কেলে বেতন নির্ধারণের সময় অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট হিসেবে প্রদানকৃত অর্থ আদায় না করায় সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৯ টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুত কিনে সেটি আবাসিক বাসায় সরবরাহের ফলে ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৭ টাকা। মেটাল ফাউন্ডারি ইন্ডাস্ট্রিজ এর বিল হতে প্রযেওজ্য হার অপেক্ষা কম হারে ভ্যাট কর্তন করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৫ টাকা। বিলম্বে কাজ সম্পাদন করার পরেও ঠিকাদারের বিল হতে বিলম্ব ফি কর্তন না করে ক্ষতি করা হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৩ টাকা। পার্টিসিপেশন ফি এর উপর প্রযোজ্য মুসক সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৭ টাকা। পুন:টেন্ডার আহ্বান না করে যোগসাজসের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে আমসহ ফলগাছ ইজারা দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৮৯৬ টাকা। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমদোন এড়ানোর লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান ছাড়ায় কোটেশনের মাধ্যমে খন্ড খন্ডভাবে ক্রয় করে ক্ষতি করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৯২৫ টাকা। পিপিআর লঙ্ঘন করে সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে আর্থিক ক্ষমতার অতিরিক্ত মূল্যের পণ্য ক্রয় করে সংস্থার ক্ষতি করা হয়েছে ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ টাকা।

পিপিআর লঙ্ঘন করে কোটেশনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৬ টাকার পণ্য ক্রয় এবং ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৯ টাকার কাজ করে সরকারি ক্ষতি করা হয়েছে এক কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৫ টাকা। সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে ঠিকাদারকে মসূল কাজের ২০ ভাগ অতিরিক্ত কাজ দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭০ টাকা। কোটেশনের শর্তমোতাবেক যোগ্য দরদাতা না পাওয়া সত্তেও কার্যাদেশ দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯৭ টাকা। আবার বিধি লঙ্ঘন করে ঠিকাদারকে মূল ক্রয়ের অতিরিক্ত ২০ ভাগ পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারি ক্ষতি করা হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৮ টাকা।

এভাবে সবমিলিয়ে কেবলমাত্র ২৪টি খাতেই ৫ বছরে সরকারের ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি করা হয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো কয়েকগুন বাড়বে বলেও দাবি করেছেন সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

স/অ