বিএনপি কঠোর অবস্থানে অনড়

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারসহ একদফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনের পথেই থাকছে বিএনপি। বরং চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করতে উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখন থেকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। দলের নেতারা মনে করেন, সরকার তাদের বাধ্য করেছে কঠোর কর্মসূচি দিতে। তাই লক্ষ্য অর্জনে এর বিকল্প দেখছেন না তারা।

চলমান আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, চলমান অবরোধ কর্মসূচির কারণে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় সারাদেশ থেকে সড়কপথে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা গেছে। নৌপথেও যান চলাচল কমে গেছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা গেলে পুরোপুরিভাবে সারাদেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফলে জেলা-মহানগর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় অবরোধ আরও জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির নেতাদের সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার ভাবছে বিরোধী দলকে তফসিলের ঘোষণা দিয়ে কাবু করবে। আসলে এটা একটি দুরাশা মাত্র। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের তফসিল ঘোষণার উদাহরণ অনেক দেখেছি। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে, সেই উদাহরণও অনেক দেখেছি। শুধু তাই নয়, তফসিল ঘোষণার পরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে- সে উদাহরণও আমরা দেখেছি। কাজেই তফসিল ঘোষণার হুমকি দিয়ে দেশের বিরোধী দলকে দূরে রেখে দেশের মানুষকে কাবু করতে পারবে না। মানুষ গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেমেছে, গণতন্ত্র আমরা অর্জন করব।

এদিকে, অবরোধের বিকল্প হিসেবে বিএনপি হরতাল ছাড়া ভিন্ন কোনো যুৎসই কর্মসূচি এখনো খুঁজে পায়নি বলে দলের নীতিনির্ধারকদের সূত্রে জানা গেছে। দলের অধিকাংশ নেতা ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের মধ্যে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর ডাকে তৃতীয় দফায় অবরোধ শুরু হচ্ছে আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে। ৪৮ ঘণ্টার এ অবরোধ শেষ হবে শুক্রবার ভোর ৬টায়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সবার শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এই সংগ্রাম, আমাদের এই অবরোধ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। আমাদের এই অবরোধ কর্মসূচি গণদাবির ওপর ভিত্তি করে। এটা নিছক বিএনপির কোনো দলীয় কর্মসূচি নয়। এটা সামগ্রিকভাবে গোটা জনগণ যে তার মালিকানা বঞ্চিত হয়েছে, যে গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ দীর্ঘদিন যত রক্ত ঝরিয়েছে তাদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো এই সংগ্রাম করছে এবং নানা রকমের রাষ্ট্রীয় উৎপীড়নের মুখেও তারা মাঠে আছেন।’

রিজভী বলেন, আমি বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির যত নেতাকর্মী রয়েছেন এবং সমমনা দলগুলো যারা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আমার আকুল আহ্বান, শত বাধা অতিক্রম করে যেমন কর্মসূচি পালন করে এসেছেন, আবার এই কর্মসূচি পালন করবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথে পথে বাধা দেবেন, মহাসড়কে অবরোধ তৈরি করবেন শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেই।

এদিকে, চলমান আন্দোলনের মধ্যে একজন ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলের একাধিক নেতার গতিবিধি নিয়ে দলের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, আমরা যতদূর জেনেছি, চাপে ফেলে দলের কিছু বয়স্ক এবং ওয়ান ইলেভেনে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত পাওয়া নেতাদের সরকারের দিক থেকে চাপ ও লোভ দেখানো হচ্ছে। বয়স ও দলের র্শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্বের কারণে কিছু নেতা হয়তো বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্যও দিতে পারেন। বিষয়টির ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নজর রাখছেন। প্রয়োজন মনে হলে কোনো কোনো নেতার সঙ্গে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যোগাযোগ করে তাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হতে পারে। সব কিছু বিবেচনা করে আন্দোলন জোরদারের ওপর নজর দিচ্ছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন জোরদার করতে রাজধানী ঢাকা এবং বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হযেছে। বিশেষ করে সংসদীয় এলাকার সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের (কেন্দ্রীয় নেতা) তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, অবরোধ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। এ কাজটি সফলভাবে করতে হলে জেলা পর্যায়ে আন্দোলনটা তীব্র হতে হবে। অর্থাৎ জেলা পর্যায়ের সড়ক-মহাসড়ক যান চলাচল এবং যেসব এলাকায় ট্রেন রয়েছে, তা চলাচল বন্ধ করতে হবে। এর ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নজর দিচ্ছেন বেশি।

বিএনপি ছাড়াও দেশব্যাপী তৃতীয় দফায় আজ থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি করবে জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও বিএনপিসহ বিরোধী দলের চলমান কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়ে রাজপথে নানা কর্মসূচিতে থাকছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। চলমান ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।