নির্বাচনের পথেই আওয়ামী লীগ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সরকার পতনের একদফা দাবির আন্দোলন কঠোর কর্মসূচিতে রূপ নেওয়া এবং শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশে^র চাপের মুখে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের গুজব রয়েছে রাজনীতিতে। এর ফলে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার কথা আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এর মধ্যেই আগামী সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় সব ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনের পথেই অগ্রসর হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বরং রাজপথে বিরোধীদের সহিংস আন্দোলন মোকাবিলা করেই এবারের চ্যালেঞ্জ উৎরাতে চাচ্ছে দলটি।

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার জেরে হঠাৎ করেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর পর থেকে প্রাণহানির পাশাপাশি প্রায় নিয়মিতভাবে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটছে। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে দিনভর মাঠে থাকছে। প্রতিবাদ মিছিল ও শান্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তারা।

পাশাপাশি নির্বাচন সন্নিকটে থাকায় দলীয় হাইকমান্ড দলের ফরম বিতরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দলীয় সভা-সমাবেশে আগামী নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোটও চাইছেন দলের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডেকেছে দলটি। ওই দিন দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও উপকমিটি গঠনসহ নির্বাচন সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো চাপে বা ষড়যন্ত্রে নির্বাচন বানচাল হবে না। সঠিক সময়ে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো দলের সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপের প্রয়োজনীয়তা আওয়ামী লীগ মনে করে না বলে স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এরপর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়ে আরও তৎপর হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিনদেশি পর্যবেক্ষক বা প্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হওয়ার দিকে আরও বেশি ধাবিত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় বিভিন্ন মহল মনে করে নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

তবে আওয়ামী লীগ কোনো অনিশ্চয়তাকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নয়। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে মনে করি না যে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার অনিশ্চয়তার কিছু আছে। কারণ সবকিছুই নির্ধারিত ছক অনুযায়ী চলছে। নির্বাচন কমিশন সঠিক সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। আওয়ামী লীগও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি, উপকমিটি গঠন হবে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছি। নির্বাচন বন্ধ করার জন্য নানা চেষ্টা অপচেষ্টা চলছে। তা মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাব।’

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে যাবে। ইতোমধ্যে ‘বিএনপির এক বিশেষ উপদেষ্টা ও নিরাপত্তাবিষয়ক সম্পাদক’ বিএনপিকে ভোটে আনার কাজ শুরু করেছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা বিএনপিকে ভোটে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। একটি পরাশক্তির রাষ্ট্র প্রতিনিধি হিসেবে তার এই উদ্যোগকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আশা করছি বিএনপি শিথিল কর্মসূচির পথ ধরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইসির শক্তিশালী নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হবে।”

এদিকে নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিল ঘোষণা প্রস্তুতিও নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করেছে ইসি। আগামীকাল রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে ভোটের অনুকূল পরিবেশ যে এখনো তৈরি হয়নি তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবদমান সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ম্যান্ডেট নেই।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে কোনো অনিশ্চয়তা আছে কিনা জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বর্তমান যা-ই থাকুক না কেন আমার মনে হয় তফসিল ঘোষণার পর সব দল নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সরকারের যে প্রতিশ্রুতি সেটির বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশা রাখি।’