বিএনপিতে কোন্দল বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন ঘিরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও ফেসবুকের মাধ্যমে তারা নগরবাসীর কাছে দোয়া চাইছেন।

বর্তমান মেয়র ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে জনসংযোগ করছেন।

এ কারণে দলে অন্তঃকোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে নগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুর প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের প্রভাব আগামী কেসিসি নির্বাচনে পড়তে পারে। এছাড়া মেয়র মনির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের। এসব কারণে বিএনপির ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মেয়র মনি ও নগর বিএনপি সভাপতি মঞ্জু একই গ্রুপের রাজনীতি করেন। এই দুই নেতার সঙ্গে জেলা বিএনপি সভাপতি ও কেসিসির সাবেক কমিশনার মনার দ্বন্দ্ব রয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মাসব্যাপী আন্দোলনে খুলনার বিএনপি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করছে।

একটি গ্রুপের নেতৃত্বে মঞ্জু-মনি, একটি মনা-এজাজ এবং অপরটি মিঠু গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। সময়ের ব্যবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তিন গ্র“প আন্দোলন কর্মসূচি পালন করায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর আওয়ামী লীগ।

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তাদের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পরাজিত হন।

এদিকে অ্যাডভোকেট মনা ২০১৪ সালের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি সেটি প্রত্যাহার করে নেন।

কিন্তু এখন তিনি পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দোয়া চেয়েছেন। দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে মনি ও মনা এখন রাজধানীমুখী।

এদিকে মেয়র মনির ওপর ক্ষিপ্ত দলীয় নেতাকর্মীরা। নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তবে কেসিসির চেয়ার ধরে রাখতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে আবার মনোনয়ন দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মনার অনুসারীরা মনির পক্ষে কতখানি কাজ করবে সেটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।

এসএম আরিফুর রহমান মিঠু যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান মেয়র একজন ব্যর্থ জনপ্রতিনিধি। নগরবাসীর উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এমনকি দলীয় মেয়র হিসেবে দলীয় কর্মীদের অবমূল্যায়ন করছেন।

অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা যুগান্তরকে বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ১৪ বছর তিনি নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।

২০১৪ সালে তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি সেটা প্রত্যাহার করে নেন এবং বর্তমান মেয়রের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সোমবার তিনি জানান, দলীয় মনোনয়নের জন্য তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, কেসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মনি পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। তিনি বলেন, বিএনপি বড় দল, একাধিক প্রার্থী হতে পারে। তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর সবাই মিলেমিশে নির্বাচনী কাজ করবে।

আগামী কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকের জয়লাভ নিশ্চিত বলে তিনি দাবি করেন।

সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি বিএনপির : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত ইভিএম মেশিন নির্বাচনের কোনো কেন্দ্রে ব্যবহার করা যাবে না।

এমনকি পরীক্ষামূলকও নয়। একইসঙ্গে দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার, বদলি, অপসারণ করে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব দাবি তোলেন বিএনপি নেতারা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

কেসিসি নির্বাচনে নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি এই ভোটযুদ্ধে অংশ নেবে বলে তিনি জানান।

সভায় আসন্ন কেসিসি নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়নে একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দলীয় কার্যালয়ে আগামী ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল মনোনয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে দলের সমর্থন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া আগামী সপ্তাহের মধ্যে সাহসী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ভোট কেন্দ্র কমিটি এবং কেন্দ্রের এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হবে।

যুগান্তর