বাড়ি থেকে নবজাতকসহ স্ত্রী গ্রেপ্তারের পর বিষ্মিত চিকিৎসক স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত নগর মাতৃ সদন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার থেকে অভিনব কায়দায় চুরি হওয়া নবজাতকটিকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করেছে। তবে উদ্ধার হওয়া নবজাতকটি আসলেই কার-এটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। নবজাতক চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শাহিনা আক্তার শুভ্রা (৪০) নামের নারীকেও গ্রেপ্তার করেছে। আর সেই নারী দাবি করেছেন নবজাতকটি তারই। তিনিও গত ১৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে ছেলে সন্তানটি জন্ম দেন।

 

তবে শাহিনা আক্তার শুভ্রা (৪০) নামের নারীর স্বামী চিকিৎসক আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন নবজাতকটিকে তার কিনা সেটি তিনি নিশ্চিত নয়। কারণ গত ৮-৯ মাস ধরে পারিবারিক কলোহের কারণে স্ত্রী শুভ্রার সঙ্গে যোগাযোগ নাই আক্তারুজ্জামানের।

 

  • এই অবস্থায় স্ত্রী শুভ্রা আদৌ আক্তারুজ্জামানেরই সন্তান জন্ম দিয়েছে নাকি সেটি নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত আরবান হেলথ কেয়ার থেকে চুরি হওয়া সেই নবজাতকই এটি-তা নিয়েই বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন আক্তারুজ্জামান। শুক্রবার সন্ধায় সিল্কসিটি নিউজের কাছে ঢাকা থেকে ফোনে এমন বিষ্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

আক্তারুজ্জামান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, গত ১৯ তারিখ রাতে স্ত্রী শুভ্রা আমাকে ফোন করে জানায় আমার একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। তবে অনেকদিন আগে একবার সে আমাকে বলেছি, সে গর্ভবতি। এরপর তার সঙ্গে আর তেমন যোগাযোগ হয়নি আমার। তবে ছেলে সন্তান হয়েছে জেনে আমি খুশিও হয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার কারণে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ছেলেকে দেখতে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে আজ (শুক্রবার) বিকেলে শুনছি সন্তানসহ স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। এটি শোনার পরে আমি বিষ্মিত। কেন সে  নবজাতক চুরির মতো এমন কাজটি করলো ভেবে পাচ্ছি না? প্রশ্ন ছুড়ে দেন আক্তারুজ্জামান।

 

পারিবারিক কলোহের জের ধরে স্ত্রীর সঙ্গে গত ৮ মাস ধরে যোগাযোগ না থাকলে শুভ্রা সন্তান সম্ভাবার ছিলেন না সেটি নিশ্চিত বলেও দাবি করেন আক্তারুজ্জামান। ফলে ওই শিশুটিকে শুভ্রা চুরি করেই নিয়ে এসেছেন বলেও দাবি করেন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানকারী আক্তারুজ্জামানা। তিনি একটি উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তার কর্মস্থল বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

 

আক্তারুজ্জামান সিল্কসিটি নিউজকে জানান, পারিবারিক কলোহের জের ধরে তার স্ত্রীর সঙ্গে গত আট মাস ধরে কোনো যোগাযোগ নাই। এর মধ্যে তিনি বাঘা থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চারঘাট থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি হয়ে আসেন। এরপর আসেন রাজশাহীতে। রাজশাহীতে অাসার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ঢাকায় যান প্রশিক্ষণের জন্য। চিকিৎসা পেশায় বাইরে বাইরে থাকা নিয়েই মূলত স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় আক্তারুজ্জামানের। তার গ্রামের বাড়ি বাঘার ব্রক্ষ্মডাঙ্গা।

 

  • আর স্ত্রী শাহিনা আক্তার শুভ্রার বাবার বাড়ি বাগমারায়। এরই সুবাদে বিয়ের পরপরই তারা দুজনে রাজশাহীতে ভাড়া থাকতেন। তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। মেয়েটি রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

ওই মেয়েকে নিয়েই থাকতেন স্ত্রী শুভ্রা। তবে বছর দেড়েক আগে নগরীর টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকায় বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন চিকিৎসক আক্তারুজ্জামান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি স্ত্রী-সন্তানকে রেখে আলাদা থাকতেন। এই বাড়ি থেকেই শুক্রবার দুপুরে নগরীর নওদাপাড়া আরবান হেলথ কেয়ার থেকে চুরি হওয়া শিশুটিসহ আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী শাহিনা আক্তার শুভ্রাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল তিনটার দিকে নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত নগর মাতৃ সদন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন রাজশাহীর পবা উপজেলার চরশ্যামপুর এলাকার দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তি খাতুনের।

 

এরপর ওইদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে একজন নারী প্রতারক মুক্তির নবজাতকটিকে কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়। পুলিশ এ ঘটনায় সহযোগিতা করার অপরাধে তোহুরা খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে। তোহুরা বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে।

স/আর

 

 

 

 

 

 

নবজাতকটিকে। নবজাতকটি চুরি করার আগের দিন নগরীর বিনোদপুর এলাকার একটি সিসিটিভির ফুটেজের ছবির সঙ্গে হুবুহু মিল রয়েছে তার। এছাড়াও মিল রয়েছে তার ভ্যানেটি ব্যাগ, হাত ঘড়িসহ পোষাকেরও।

এতেই পুলিশ ধারণা করছে, ওই নারীই নগরীর নওদাপাড়া আরবান হেলথ কেয়ার থেকে চুরি হওয়া নবজাতকটি চুরি করে নিয়ে এসেছেন। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তিনি নবজাতকটিকে নিজের বলে লালন-পালন করছেন।

 

শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তারের সময় সিসিটিভিতে ধরা পড়া ফুটেজের সঙ্গে মিলে যাওয়া পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র নগরীর বাসার রোড়ের তার ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

 

এর আগে শুক্রবার দুপুরে নগরীর টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকার ‘সপ্তষি’ নামের ৫০৭ নম্বর বাড়ি থেকে একই এলাকার আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী শাহীন আক্তার শুভ্রাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় ওই নবজাতকটিকেও উদ্ধার করা হয়।

 

বাড়ির মালিক আমিনুল ইসলাম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, শুভ্রা তার বাড়িতে প্রায় দেড় বছর ধরে ভাড়া থাকেন। তিনি রাজশাহীর একটি বেসরকারি ইউনির্ভাসিটির শিক্ষক। তার স্বামী বাঘায় ডাক্তারী পেশায় কর্মরত । আর শুভ্রার ক্লাস কেজিতে পড়া অহনা নামের একটি মেয়ে রয়েছে।  সেই সুবাদে স্বামী আক্তারুজ্জামন বাঘায় থাকেন। আর স্ত্রী শুভ্রা টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকার এই বাড়িতে থাকতেন।

 

তিনি সিল্কসিটিনিউজকে আরো বলেন, শুভ্রা গর্ভবতি ছিলেন বলে আগেই দাবি করেছিলেন। গত ১৯ বা ২০ তারিখে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে তার একটি ছেলে সন্তান হয় বলেও তিনি আমাদের জানান। আর তার আগে তারা বাচ্চা হলে বাড়িতে যে সকল প্রস্তুতি লাগে, সবগুলোই তিনি করেছেন। ছোট-ছোট কাঁথা সেলাই, জামা-কাপড় ইত্যাদি সব তৈরি করেন তিনি।

 

এ বিষয়ে মতিহার থানা জোনের এসি শুশান্ত কুমার রায় জানায়, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি যাকে আটক করা হয়েছে, তিনি ক্লিনিক শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে এসেছেন। শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে চুরি হওয়া শিশুর নানা মুক্তার হোসেন সিল্কসিটিনিউজকে জানায়, আমি বাচ্চা চিনতে পেরেছি, আমার নাতি সে। আটক হওয়া নারীই আমার মেয়ের সন্তানটিকে চুরি করে নিয়ে এখন নিজের দাবি করছে।’

 

চুরি হওয়া নবজাতকের মা চরশ্যামপুর এলাকার দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘চুরির পরে আমি এখনো আমার সন্তানকে দেখিনি। আমাকে খবর দিলো। আমি দেখলে চিনতে পারবো ‘