বাসে তরুণীর ভিডিও ধারণকালে যুবককে ধোলাই, পুলিশে সোপর্দ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: প্রতিদিনের মতই আজকেও অফিসে (নবাবপুর রোড) আসার জন্য আদমজী’র কোমল গাড়িতে উঠি চিটাগাং রোড থেকে।
সিটিং গাড়িতে যাত্রী অতিরিক্ত নেয়না। আমি পেছনে একটা সিট পেয়ে বসে পড়ি। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে পেরিয়ে প্রায় টিকাটুলি আসার পরে ও বাসের কন্ডাক্টর আমার বাকি টাকা দিচ্ছে না দেখে মানিব্যাগটা পকেটে রাখার জন্য বাঁকা হই। এসময় চোখে পড়ে আমার ডান পাশের সিটের লোকটা তার ডান পাশের সীটে বসা আপুর ভিডিও করছেন উনার অজান্তে।
সামান্য সময় পর্যবেক্ষণ করলাম, আসলেই কি ভিডিও হচ্ছে কিনা? যখন শিউর হলাম তখন প্রায় ফ্লাইওভার থেকে নেমে যাচ্ছি অর্থাৎ গুলিস্তান চলে আসছি।
আমিও মোবাইলে ক্যামেরা বের করে ভিডিও করলাম যে সে ভিডিও করছে এবং এখন থেকে যত কার্যকলাপ হবে সব রেকর্ড করবো।
যাক, সে আপুকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি উনার পরিচিত কিনা? বখাটেটাকেও জিজ্ঞেস করলাম, আপনি পরিচিত কিনা?
দুজনের উত্তর ই “না” হওয়ায় জিজ্ঞেস করলাম আপনি উনার অজান্তে কেন উনার ভিডিও করছেন? তাও উনি ঘুমাচ্ছিলেন এই সময়ে?
আমি দুষ্টটার মোবাইলটা নিয়ে আপুকে ভিডিওটা দেখালাম।
আপুটা রেগে উঠেই চিৎকার করায় পাশের কয়েকজন পুরুষ এবং মহিলা জড়ো হলেন। কিন্তু বখাটে তো অনড় তার কথায়। সে ইচ্ছাকৃত করে নাই। ভুলে হয়ে গেছে।
আশেপাশের কয়েকজনকে বললাম, ওকে কী করা যায়? আপুকে ও জিজ্ঞেস করলে বলেন, ওকে পুলিশে দেন।
দুই সিট সামনে একজন সম-বয়সী আপুও ছিলেন যিনি রেগে গিয়ে যোগ দিলেন আমাদের সাথে। তিনিও চার্জ করলেন বখাটেটাকে। পাশের একজন পুরুষ বলছিলো, যাক, মাপ চেয়ে ছেড়ে দিতে বলেন। আমি কট্টর ভাষায় উত্তর দিলে তিনি নেমে যান গাড়ি থেকে।
কেউই যখন যাচ্ছেনা আমি বললাম আপনারা ওকে ধরেন আমি পুলিশ নিয়ে আসতেছি। আমাকে যেতে মানা করে আরেকজন ভাই বললেন, আমিই যাচ্ছি, আপনি থাকেন। তখন কন্ডাক্টরকে আমার বাকি টাকা দিতে বলছিলাম এই ফাঁকে বখাটে সেই ভিডিও ডিলিট করার ট্রাই করে। তার পেছনে এক ভাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে এতক্ষন পর্যবেক্ষন করছিলেন। তিনি বখাটেকে ধপাস ধপাস কয়টা উত্তম মধ্যম দিলেন। আমি ফিরেই দেখি এই অবস্থা। আমি একটু আগেও চিন্তা করি নাই এমন একজন লোক সেই বখাটের পেছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।
মোবাইলটা হাত থেকে নিয়েই নিলাম এবার। সেই বখাটে আমাকে বলে, পুলিশ ঘুষ খেয়ে আমাকে ছেড়ে দিবে। আপনার লাভ কী হবে?
যা উত্তর দিলাম, তা এই ভিডিওতেই আছে (দেখতে পারেন)।
দুর্বৃত্তটাকে সবাই মিলে ধরে পুলিশ সার্জেন্টের কাছে নিয়ে গেলাম। যেতে যেতে ভিডিও করছিলাম দেখে সে আবার আমার নামে পুলিশের কাছে বিচার দেয়, কেন আমি ভিডিও করছি!!!
পুলিশের সাথের জন আমাকে ভিডিও করতে মানা করেন। আমিও অফ করে দেই।
এরপরের ঘটনা গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের কর্তব্যরত এসআই ওবায়দুল সাহেবের রুমেই ঘটে।
ততক্ষণে বাইরে উৎসুক মানুষের ভীড় লেগে যায়।
এসআই সাহেব হাতে নাতে প্রমাণ পান যে সে ভিডিও করেছে এবং ডিলিট করার চেষ্টা করেছে। আমি অবাক হলাম, ওই মুহুর্তেই ২ জন পুরুষ আর দুইজন মহিলা, একজন সেই আপু আর মুরুব্বিসহ আর কাউকেই সাথে পেলাম না সাপোর্টের জন্য যারা আমার সাথেই গাড়িতে ছিলেন।
সেখানে বিচার কার্যের এক ফাঁকে নন-ভিক্টিম আপু চলে যান বিদায় নিয়ে। অন্য এক ভাই ও চলে যায়। থেকে যাই আমি ভিক্টিম আর সেই বয়স্ক মহিলাটা।
এসআই সাহেব চার পাঁচটা মোটা বেত নিয়ে সেই রুমেই পেটান বখাটেকে। পেটাতে পেটাতে বারান্দায় চলে গেলে আবার ভেতরে এনেই আমাদের সামনে পেটাতে থাকেন।
এক সময় তাকে অন্য রুমে নিয়ে যেয়ে আমাদের তিনজনের সাথে আলোচনায় বসেন। কী করা যায়? এসআই সাহেব ভিক্টিম আপুকে বলেন, মামলায় গেলে সংশোধন হবে না সে। আপনাকে (ভিক্টিম) এর রেশ টানতে হবে। যে মাইর দেওয়া হয়েছে তার অবস্থার ওপর এটাই যথেষ্ট; আমি মনে করি। আমি আপনাকে এবং মূল সাক্ষীর পাশেই আছি শতভাগ সাপোর্ট দিয়ে। এখন আপনি যা করতে বলবেন আমি তা-ই করবো।
আপুকেও বুঝালাম, তার ফ্যামিলিকে এই ব্যাপারটা জানিয়ে তাকে আরো কিছু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিতে বলতে পারেন। যেহেতু সে বিবাহিত। মামলার জন্য বংশাল থানায় যেতে হবে- যা ঝামেলার কাজ।
পরে এটাই হলো যে, সেই বখাটেকে মুচলেকা নিয়ে এবং তার কর্মস্থলে জানিয়ে বিস্তারিত তার সম্পর্কে লিখে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এসআই সাহেব আমাদের তিনজনকে বিদায় দেন।
ভিক্টিম এবং নন ভিক্টিম দুজনেই এই JFWBD সম্পর্কে জানেন না। তাদের ইনভাইট করলাম গ্রুপে। তারা নোট করে নিলেন। আশা করি গ্রুপে আসছেন আপনারা।
পুরো ঘটনার ভিডিও এখানে: https://youtu.be/lBTfLHgik3I
এই সম্পর্কে কোন আপডেট জানতে চাইলে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের এসআই ওবায়দুল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে ০১৭১৬-২৬৪৫৪১।
আমি এমন একটা কাজ করেছি আমার পরিবারের কাউকে না কাউকে প্রোটেক্ট করার জন্য। তারা যেনো অন্য কোনো পুরুষ দ্বারা এমন পরিস্থিতিতে না পড়েন এবং পড়লেও হেল্প পায় আমার মতোই কারো দ্বারা।
সবাই ভালো থাকুন।
এই বদটা র নাম জাভেদ। নারায়াণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপাতে থাকে। প্রতিদিন চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান আসে কর্মস্থল বঙ্গবাজারের উদ্দেশ্যে।
আপনার চোখে পড়লে কী করবেন সেটা আপনিই ভালো জানেন। তার পুরো ছবি এখানে আছে।
https://goo.gl/WA3V2W
ঘটনার সময়ঃ সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা ৪০ মিনিট
লোকেশন: গুলিস্তান, ঢাকা।
[Sanskriti Dhaka নামের ফেসবুক পেজ-এ ইউসুফ মোহম্মদ সাদ্দাদ-এর লেখাটি এখানে প্রায় হুবহু উপস্থাপন করা হলো। একটা সময়ে আমাদের মিডিয়া সংস্কৃতি ছিল ঘটনার শিকারের ছবি প্রচার করা, তার পরিচয় তুলে ধরা। সেই অস্বস্তিকর সময়গুলো আমরা পাড় হয়ে এসেছি। এখন অপরাধীর ছবি, নাম-ধাম তুলে ধরার নৈতিক দায়িত্ব পালন করা হয়। সে হিসেবে এখানে অপরাধীর ছবি ও অন্যান্য বয়ান রয়েছে। এর ফলে এ ধরনের অপরাধ যারা করে তারা অন্তত কিছুটা সাবধান হবে, এ ধরনের অপরাধ কিছুটা হলেও কমবে, কমবে এ ধরনের অপরাধের শিকার অসহায় নারীদের মর্মবেদনা- যাতনা। নারী দিবসের এই আমাদের বাসনা