আদালতে বদরুল ও নার্গিসের সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: সিলেটে সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসের হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ছিল ৩২ পৃষ্ঠার। পুরো রায়টি বাংলায় লেখা ছিল। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সহিংসতার বিচার পেলেন নার্গিস।

 

চার্জগঠন থেকে ৯ কার্যদিবসের মধ্যে আদালত ৩২৬ ধারায় বদরুল ইসলামের যাবজ্জীবন ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুর রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

 

এদিকে, রায় ঘোষণার পর নার্গিসের গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার হাউসা গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান, নার্গিসের চাচাতো ভাই রুম্মান আহমদ।

 

এদিকে রায় ঘোষণার পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে ইনজাস্টিস (প্রতারণা) করা হয়েছে।’

 

আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান জানান, নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার রায়টি ৩২ পৃষ্ঠার। পুরোটা বাংলায় লেখা। ৩২ পৃষ্ঠা রায়ের মধ্যে বিচারক রায় ঘোষণার সময় ১০ পৃষ্ঠা পড়েন।

 

তিনি আরও জানান, ৩০৭, ৩২৪, ৩২৬ ধারায় বাংলাদেশে এই প্রথম কোনও আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো, তাও আবার সিলেটে। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আদালতে বদরুল আর নার্গিসের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। এ ধরনের নৃশংসতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

 

এদিকে, আসামি বদরুল ইসলামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘আদালত আবেগপ্রবণ হয়ে এই রায় দিয়েছেন। রায়ের কপি তুলে সার্বিক বিষয় জানার পর এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’

 

তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন বদরুল নেশাগ্রস্ত ছিলো। এমনকি সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সেখানে সে মেধার লড়াইয়ে ভর্তি হয়েছিল। আমরা আশাবাদী ছিলাম এসব বিষয় আদালত বিবেচনা করে তাকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেবেন কিন্তু তা হয়নি।

 

মামলার বাদী খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, `আমরা হক (ন্যায়) বিচার পাইছি। এর লাগি সিলেটসহ সারা (পুরো) দেশবাসীর গেছে (কাছে) আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ।’ তিনি আরও জানান, ‘এখন কেউ অপরাধ করতে ডরাইব (ভয় পাবে)।যদি বদরুলের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা অয় (হয়) তাহলে সিলেটের রায় যেন আদালত বহাল রাখইন (থাকে)অটা (এই) আমরার একমাত্র চাওয়া।’

 

আদালত সূত্র জানায়, খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলাটি সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিলো। গত ১ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নার্গিসের হত্যাচেষ্টা মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়। মামলায় একমাত্র আসামি ছিল বদরুল ইসলাম। বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলাটি সিলেট মহানগরীর শাহপরাণ থানায় তার চাচা আবদুল কুদ্দুস। গত বছরের ৫ অক্টোবর সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল।

 

এরপর ওই বছরের ৮ নভেম্বর খাদিজা হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার এসআই (সাবেক) হারুনুর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট গৃহীত হয়। এরপর ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু কাজ শুরু হয়।

 

এরপর ১৫ ডিসেম্বর বদরুলকে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে হাজির করা হয়। এদিন সাক্ষ্য দেন স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এএম রেজাউস সাত্তার। ১১ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষী দেন নার্গিসের মা-বাবা, বদরুলের জবানবন্দি গ্রহণকারী বিচারক ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৫ জন।

 

এর আগে ৫ ডিসেম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। আলোচিত এ মামলায় ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জন সাক্ষ্য দেন। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। পরে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউনকে