বারবার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায়…

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: মেয়েটি দেখতে কালো, উচ্চতাও কম। এ কারণে তাঁর বিয়ে ভেঙে যেত। সম্প্রতি একটি বিয়ে ভেঙে যায়। বারবার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন মেয়েটি। এরপর নিজেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গলায় ফাঁস লাগিয়ে পরপারে পাড়িও জমান। গতকাল সোমবার সকালে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মেয়েটির নাম রিতা চক্রবর্তী (২১)। রিতা পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক গ্রামের দুলাল চক্রবর্তীর মেয়ে। তিনি পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করতেন।

রিতা চক্রবর্তীর চাচা গোবিন্দ চক্রবর্তী জানান, রিতা উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর থেকে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করে। রিতার পরিবারও চাইছিল পড়াশোনার মধ্যে মেয়েকে বিয়ে দিতে। তবে বরপক্ষ রিতাকে দেখে যাওয়ার পর বিয়ে ভেঙে দিত। গত তিন বছরে অন্তত ১৫ বার বিয়ে ভেঙে যায়। বরপক্ষ মেয়ে দেখার পর বলত, পরে জানাব। এরপর আর তারা যোগাযোগ রাখত না। বারবার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় রিতা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সম্প্রতি একটি বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েছিল।

কিন্তু বরপক্ষ বিয়েটি ভেঙে দেয়। এরপর থেকে রিতা খুবই ভেঙে পড়েন। গতকাল সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে রিতা ঘর থেকে বের হন। পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির পাশের বাগানে একটি আমগাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান। পরিবারের লোকজন রিতাকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

পিরোজপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের প্রভাষক রাউফুন নাহার বলেন, সাধারণত প্রচণ্ড রকমের মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একজন মানুষ সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সেই মুহূর্তে তাঁর মনে হয়, একমাত্র মৃত্যুই তাঁকে এসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্নতায় ভোগার ফলে জীবনের প্রতি মানুষের আগ্রহ যখন কমে যায়, তখন আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসে।

গায়ের রং কালো হলে আমাদের সমাজে একজন মেয়েকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও অপমানের সম্মুখীন হতে হয়। এতে ছোটবেলা থেকেই তাঁর আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস কমে যেতে থাকে এবং একসময়ে তা বিষণ্নতায় রূপ নেয়। তবে আত্মহত্যা কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।

প্রথম আলো