বাবা-মায়ের প্রতি এই শুদ্ধাচারগুলো পালন করুন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

করোনারভাইরাসের এই তাণ্ডবে মানুষ সবদিক থেকে বিপদগ্রস্ত। কোয়ারেন্টিন বা লকডাউন অবস্থায় থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও বেরিয়েছে যে লকডাউনের মাঝে গৃহনির্যাতন ও কলহ বেড়েছে। আপনার সাথে হয়তো বাবা-মা থাকেন। কারো বাবা-মা এখনো সুস্থ-সবল আছেন। আবার কারো বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছেন। এই বিপর্যস্ত অবস্থায় বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এখানে বাবা-মায়ের প্রতি কিছু শুদ্ধাচার তুলে ধরা হলো। তাঁদের প্রতি আপনার এই দায়িত্বশীলতা কেবল এই লকডাউন অবস্থার জন্যে প্রযোজ্য নয়, এটা সারাজীবনের জন্যেই পালনীয়। তাঁরা যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন এই দায়িত্ব আপনাকে গুরুত্বের সাথে পালন করা উচিত।

১. অনেকেই জরুরি ব্যবস্থায় অফিস করছেন। আবার বাজার-ঘাটেও তো যেতে হয়। যদি জরুরি কাজে বাইরে যান কিংবা অফিস থেকে ফেরেন, তবে ঘরে ফিরেই বাবা-মার সঙ্গে দেখা করুন। তাঁদের সালাম দিন ও কুশল বিনিময় করুন।

২. এই বয়সে বাবা-মায়েরা একাকী হয়ে যান। তারা সন্তানদের সঙ্গ চান। তাই তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান।

৩. বাইরে থেকে ফেরার আগে তাদের কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা বা প্রয়োজনীয় কিছু আনতে হবে কিনা জিজ্ঞাসা করুন। না লাগলেও কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। নাই চাইতে সন্তানের কাছ থেকে পাওয়ায় তাঁরা দারুণ খুশি হবেন।

৪. নিয়মিত তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিন। অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

৫. বয়স বাড়লে মানুষ দ্বিতীয় শৈশবে চলে যায়। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের শিশুসুলভ আচরণে মোটেও বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। এসময়টাতে তাঁদের প্রতি সহনশীল ও সহমর্মী হোন।

৬. কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলেও তাঁদের সাথে তর্কে জড়াবেন না। ধমকের সুরে কোনোভাবেই কথা বলবেন না।

৭. তাঁদের যেকোনো প্রশ্নের জবাব বিনয়ের সাথে দিন।

৮. খাবারের টেবিলে তাঁদের সাথে নিয়ে বসুন। সবার আগে তাঁদের প্লেটে খাবার তুলে দিন।

৯. রাতে ঘুমানোর সময় আগে তাঁদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন। তারপর নিজে ঘুমাতে যান।

১০. বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলুন। তাদের পরামর্শ ও দোয়া নিন। মনে রাখবেন, আপনার ধ্যান-ধারণা সমকালীন হলেও জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তাদের চিন্তা ও অভিজ্ঞতা আপনার চেয়ে অনেক বেশি।

১১. গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক বিষয়ে তাঁদের সাথে আগবাড়িয়ে কথা বলবেন না। তাঁদের সিদ্ধান্ত, পরামর্শ বা উপদেশ আপাতত অপছন্দনীয় হলেও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।

১২. বাসায় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তাঁদের সঙ্গে রাখুন। বাসার কারো আচরণে যেন এমনটা না মনে হয় যে, বৃদ্ধ হয়েছেন বলে তাঁরা এখন বোঝা বা অপাত্র হয়ে গেছেন।

১৩. মা ও অবসরপ্রাপ্ত বাবাকে বিনয়ের সাথে নিয়মিত সাধ্যমতো হাতখরচ দিন।

১৪. সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আপনার ব্যক্তিগত কাজের পাশে তাঁদের জন্যেও বিশেষ সময় রাখুন। তাঁদের পছন্দের খাবারের ব্যবস্থা করুন বা তাঁদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটান।

১৫. তাঁরাও ভুল করতে পারেন। কোনো অন্যায় বা ভুল দেখলে তা বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বলুন।

১৬. জীবনসায়াহ্নে সন্তানের কাঁধে ভর দেওয়ার আকুতি তাঁদের মাঝে সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় তাঁদের গ্রামে পাঠিয়ে বা আলাদা রেখে গৃহকর্মী দিয়ে পরিবেষ্টিত করে রাখবেন না।

১৭. আপনার শিশুকালে তাঁরা যেভাবে আপনাকে আগলে রেখেছিলেন, তাঁদের বৃদ্ধবয়সে সেভাবেই আগলে রাখুন।

১৮. বোঝা ভেবে তাঁদের বৃদ্ধশ্রমে পাঠানোর কথা ভুলেও চিন্তা করবেন না।

১৯. জীবন যেমন স্বাভাবিক, মৃত্যুও তেমনই স্বাভাবিক। জীবন যেমন সম্মানজনক, মৃত্যুও তেমনি সম্মানজনক হওয়া উচিত। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাঁদের হাসপাতালে একাকী ফেলে রাখবেন না। চিকিৎসাকালে শেষ পর্যন্ত তাঁদের পাশেই থাকুন।

২০. আপনার কোলে মাথা রেখে, হাতে হাত রেখে মৃত্যু তাঁদের কাছে সবচেয়ে শান্তির ও সম্মানজনক হয়ে ওঠে। তাঁরা চলে যাওয়ার পর যার যার ধর্মমতে পরবর্তী করণীয় পালন করুন। গরীব-এতিমদের দান করতে পারেন।