বাজারের সেরা ৭ ক্যামেরা স্মার্টফোন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

২০১৭ শেষে এখন চলছে ২০১৮। কিন্তু স্মার্টফোনের ‘প্রজন্ম এবং বাজার’ হয়তো সময়ের থেকেও একটু বেশিই দ্রুত। আজ যে স্মার্টফোনটিকে আপনি বাজারের সেরা ভাবছেন, হয়তো মাস কয়েকের মধ্যেই সেই ফোনটিকে বাজার ছেড়ে দিতে হচ্ছে অন্য কোনো হালনাগাদ স্মার্টফোনের কাছে। ২০১৭’র স্মার্টফোনের বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পৃথিবীব্যাপী মানুষ আজ ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকছে। পিছিয়ে নেই আমরা বাঙালিরাও। আজ একটি ভালো মানের স্মার্টফোনের ক্যামেরা রীতিমতো টক্কর দিচ্ছে অনেক ভালো মানের ভিডিও ক্যামেরাকেও। শুধু ছবি নয়, আজকে স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে সিনেমাটোগ্রাফিও করা যাচ্ছে অনায়াসে। তাও আবার র’ (লগ ফাইল) ফরম্যাটে! সত্যিই স্মার্টফোন এবং এর ক্যামেরা নিয়ে আজ মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। চলুন জেনে নিই এই সময়ের সেরা ৭ স্মার্টফোনের ক্যামেরা সম্পর্কে।

১. গুগল পিক্সেল ২/ পিক্সেল ২ এক্সএল

গুগলের ফ্লাগশিপ ফোন মানেই নতুন কিছু, নতুন কোনো চমক! ২০১৭ সালেও গুগল স্মার্টফোনপ্রেমীদের নিরাশ করেনি। বছরের শেষপ্রান্তে এসে এবারো গুগল তার বরাবরের ম্যাজিক দেখিয়ে বাজারে নিয়ে এসেছে শ্রেষ্ঠ দুই ফোন, গুগল পিক্সেল ২ এবং পিক্সেল ২ এক্সএল। দুটি ফোনের আয়তন এবং বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য থাকলেও ফোন দুটির ক্যামেরা সেটআপ একইরকম। গুগল পিক্সেল ২ লাইনআপের রিয়ার ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে ১২.২ মেগাপিক্সেলের বিএসআই সেন্সর, যা ১.৮ অ্যাপাচার বিশিষ্ট। দুই স্তর বিশিষ্ট অটোফোকাসের এই সেন্সরে ব্যবহৃত হয়েছে পিডিএফ এবং লেজার, দুই প্রযুক্তিই। ওআইএস সমৃদ্ধ এই ক্যামেরা ৪কে, ১০৮০ পিক্সেল, ৭২০ পিক্সেল সব ধরনের রেজ্যুলেশনে ভিডিও ধারণ করতে পারে। সামনের ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের সেন্সর (২.৪ অ্যাপাচার বিশিষ্ট), যা ১০৮০ পিক্সেলে ভিডিও ধারণ করতে পারে।

গুগল পিক্সেল ২/ পিক্সেল ২ এক্সএল

এ বিষয়ে অন্য কোম্পানি থেকে গুগল আলাদা, কারণ এর উভয় ক্যামেরায় আছে ১.৪ মাইক্রন পিক্সেল, যা প্রচুর আলো টানতে সক্ষম। এছাড়া গুগল সবসময় তাদের ক্যামেরা অ্যালগরিদমে ব্যবহার করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এইচডিআর প্লাস মোড, যা গুগলের আবিষ্কৃত বলেই তারা সবচেয়ে প্রথমে ব্যবহারের সুযোগ পায়।

২. স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৮

দক্ষিণ কোরিয়ার স্মার্টফোন জায়ান্ট এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের নোট সিরিজে সর্বশেষ সংযোজন ছিল স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৮। হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের এক অপূর্ব সম্মিলন নোট সিরিজের এই সর্বশেষ স্মার্টফোনটি। এর রিয়ার ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে ১২ মেগাপিক্সেলের দুটি সেন্সর। প্রধান সেন্সরটি ১.৭ অ্যাপাচার বিশিষ্ট, ১.৪ মাইক্রন পিক্সেল সমৃদ্ধ এবং এতে আছে দুই স্তর বিশিষ্ট পিক্সেল অটো ফোকাস! ২য় সেন্সরটি ২.৪ অ্যাপাচার বিশিষ্ট এবং ১ মাইক্রন পিক্সেল সমৃদ্ধ। এছাড়া ওআইএস, লেজার ফোকাস, ২ গুণ অপটিক্যাল জুম, ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধাসহ একটি আদর্শ ফ্লাগশিপ ফোনের যাবতীয় সব বৈশিষ্ট্যই এই স্মার্টফোনে উপস্থিত।

স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৮

সেলফি ক্যামেরায় আছে ১.৭ অ্যাপাচার বিশিষ্ট ৮ মেগাপিক্সেলের সেন্সর যা ১.২২ মাইক্রনপিক্সেল সমৃদ্ধ। এই স্মার্টফোনটি ৪কে ভিডিও ধারণের পাশাপাশি একইসাথে ৯ মেগাপিক্সেলের ছবি ধারণ করতে পারে, যা সাধারণত আইফোনের একটি ফিচার। অ্যান্ড্রয়েডের মধ্যে সাধারণত স্যামসাংই একমাত্র এই সুবিধাটি দিয়ে থাকে।

৩. স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮/এস৮ প্লাস

স্মার্টফোন জায়ান্ট স্যামসাং ২০১৭’র এপ্রিলের দিকে বাজারে নিয়ে এসেছিল তাদের অত্যন্ত জনপ্রিয় গ্যালাক্সি এস সিরিজের দুই ফ্লাগশিপ ফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ এবং এস৮ প্লাস। স্মার্টফোন দুটি আকার- আয়তনে ভিন্ন হলেও ক্যামেরার বৈশিষ্ট্য একই রকম। ফোন দুটির রিয়ার ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে ১.৭ অ্যাপাচার বিশিষ্ট ১২ মেগাপিক্সেলের সনি আইএমএক্স ৩৩৩ এক্সমর/ স্যামসাং আইএসও সেল এস৫কে২এল২ সেন্সর, যা ১.৪ মাইক্রনপিক্সেল সমৃদ্ধ। ফোন দুটিতে আদর্শ ফ্লাগশিপ ফোনের সব বৈশিষ্ট্য, যেমন দুই স্তরের পিক্সেল পিডিএএফ, লেজার ফোকাস ও আইএস, ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং এর মতো সব সুবিধাই বিদ্যমান। সেলফি ক্যামেরায় দেয়া হয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের সনি আইএমএক্স ৩২০ এক্সমর সেন্সর, যাতে রয়েছে ১.৭ অ্যাপাচার এবং ১.২২ মাইক্রনপিক্সেল।

 

 

 

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮/এস৮ প্লাস

এ ফোনটিতেও ৪কে ভিডিও ধারণের সাথে সাথে ৯ মেগাপিক্সেলের ছবি তোলা সম্ভব। স্যামসাং সাধারণত তাদের কড়া ইমেজ প্রসেসিং-এর জন্য বিখ্যাত। ফোনটির বিশেষ ক্যামেরা অ্যালগারিদম এবং এইচডিআর প্লাস মোড দিন কিংবা রাত- সবসময়েই দৃষ্টিনন্দন ছবি তোলায় সমান কার্যকরী।

৪. আইফোন এক্স

অ্যাপেলের সর্বশেষ ফ্লাগশিপ ফোন আইফোন এক্স বাজারে আসে ২০১৭ এর নভেম্বরে। ফোনটির রিয়ার পানেলে রয়েছে দুটি ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সর। এর আরজিবি সেন্সরটি সনির নতুন এক্সমর আরএস সেন্সর, যা ১.৮ অ্যাপাচার বিশিষ্ট এবং ২য় রিয়ার সেন্সরটি ১২ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো (২.৪ অ্যাপাচারের) লেন্স। স্মার্টফোনটিতে আছে ওআইএস, ২ গুণ অপটিক্যাল জুম (টেলিফটো লেন্সের কারণে), পিডিএএফ, একই সাথে ৪কে রেকর্ডিং এবং ৮ মেগাপিক্সেল ছবির সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু। সেলফি ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়েছে ৭ মেগাপিক্সেল এবং ২.২ অ্যাপাচারের সি-মস বিএসআই লেন্স।

 

 

আইফোন এক্স

অ্যাপেলের সফটওয়্যার অপটিমাইজেশনের খ্যাতি দুনিয়া জুড়ে। নতুন আইফোন এক্স এর ক্যামেরা অপটিমাইজেশনও অসাধারণ। এই ফোনের এইচডিআর মোড ছবি এবং প্যানোরমা উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত কাজের।

৫. হুয়াওয়ে মেট ১০/ মেট ১০ প্রো

২০১৭ সালের নভেম্বরে চাইনিজ ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে বাজারে আনে দুটি ফ্লাগশিপ ফোন- মেট ১০ এবং মেট ১০ প্রো। স্মার্টফোন দুটি আকার ও আয়তনে ভিন্ন হলেও ক্যামেরা বৈশিষ্ট্য একই রকম। এর রিয়ার প্যানেলে আছে দুটি ক্যামেরা; একটি ১২ মেগাপিক্সেলের বিএসআই আরজিবি সেন্সর (১.৬ অ্যাপাচার) এবং একটি ২০ মেগাপিক্সেলের মনোক্রোম সেন্সর (১.৬ অ্যাপাচার)। ফোন দুটির ক্যামেরা সেটআপে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে আরেক বিশ্বখ্যাত ক্যামেরা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘লেইকা’। এতে আছে দুই গুণ লসলেস জুম, দুই স্তরের অটো ফোকাস, ওআইএস, ৪কে রেকর্ডিং সহ যাবতীয় সবকিছুই।

হুয়াওয়ে মেট ১০/ মেট ১০ প্রো

সেলফি ক্যামেরায় আছে ২.০ অ্যাপাচারের ৮ মেগাপিক্সেলের লেইকা লেন্স।

৬. এলজি ভি৩০

দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট এলজির পক্ষ থেকে ২০১৭ এর সেপ্টেম্বরে বাজারজাত করা এলজি ভি৩০ ক্যামেরার ক্ষেত্রে একটু বেশিই কিছু। কারণ এই প্রথম মোবাইল ফোনের ইতিহাসে র’ মোডে (লগ ফাইল) ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। এছাড়া এলজির একটা বিশেষ লেন্সই থাকে বেশি ‘ফিল্ড ভিউ’ পাবার জন্য। এই ফোনের রিয়ার ক্যামেরার দুটি সেন্সরের একটিতে ১.৬ অ্যাপাচার এবং ১৬ মেগাপিক্সেলের সনি আইএমএক্স ৩৫১ এক্সমর আরএস সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে যা ১ মাইক্রন পিক্সেল সমৃদ্ধ। ১৩ মেগাপিক্সেলের ২য় সেন্সরটি (১২০ ডিগ্রি ফিল্ড ভিউ) ১.৯ অ্যাপাচার বিশিষ্ট। ফোনটিতে দুই স্তরের অটো ফোকাস, ওআইএস, ৪কে রেকর্ডিং সহ যাবতীয় সব সুবিধাই দেয়া আছে।

এলজি ভি৩০

এর সেলফি ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়েছে ২.২ অ্যাপাচার বিশিষ্ট এবং ১.১২ মাইক্রনপিক্সেলের ৫ মেগাপিক্সেল বিএসআই সেন্সর।

৭. আইফোন ৮ প্লাস

অ্যাপলের তরফ থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাজারে আসে আইফোন ৮ প্লাস, যার বাজার মূল্য আইফোন ১০’এর থেকে কিছুটা কমই। অসাধারণ ক্যামেরা সেটআপ আছে এই স্মার্টফোনের। রিয়ার প্যানেলে ব্যবহার করা হয়েছে দুটি ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সর, যার একটি আরজিবি এবং অন্যটি টেলিফটো। মূল সেন্সরটি সনির তৈরি যা ১.৮ অ্যাপাচার বিশিষ্ট এবং ১.১২ মাইক্রন পিক্সেল সমৃদ্ধ। স্মার্টফোনটিতে ওআইএস, ২ গুণ অপটিক্যাল জুম (টেলিফটো লেন্সের কারণে), পিডিএএফ, একইসাথে ৪কে রেকর্ডিং এবং ৮ মেগাপিক্সেল ছবির সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা বর্তমান।

আইফোন ৮ প্লাস

সেলফি ক্যামেরাটি ২.২ অ্যাপাচার বিশিষ্ট ৯ মেগাপিক্সেলের সি-মস বিএসআই লেন্স।