বাঘায় ৩ দিনে দুই শতাধিক বিঘা জমি পদ্মা নদীর গর্ভে

আমানুল হক আমান:
রাজশাহীর বাঘায় রাক্ষুসী পদ্মা নদী তিন দিনের অব্যাহত ভাঙ্গনে প্রায় দুই শতাধিক বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

 
শুক্রবার দুপুরে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, নবগঠিত পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের খলিল মাঝির ঘাট থেকে ফজল মেম্বোরের ঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাড় যেভাবে ভাংছে এভাবে ভাংতে থাকলে আর কয়েক দিনের মধ্যে এই এলাকার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও নদী ভাঙ্গনে ১৫টি চরের মানুষ হুমকির মধ্যে রয়েছে।

 
চকরাজাপুরের মোস্তাক আহম্মেদ শিকদার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, তিনদিনে ১৫টি বাড়ি ভাঙ্গনের কারনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফসলী জমিসহ গাছ-পালা, নদীতে বিলীন হয়েছে। দুই শতাধিক লোকের দুই শতাধিত বিঘা জমি গত তিন দিনের রাক্ষুসী পদ্মা কেড়ে নিয়েছে। এভাবে ভাংতে থাকলে  কিছুদিনের মধ্যে এলাকার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে।

 
গত তিন দিনে পদ্মার স্রোত ও ঢেউ প্রবল আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে চরের ১৫টি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের মানুষ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। ফলে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে মানুস উচু এলাকায়।

 
ভাঙ্গন কবলিত পদ্মার চরে বসবাসরত পরিবারের মানুষের প্রতিটি মুহুর্ত কাটছে আতংকে। মাথা গোজার ঠাইটুকু অনেকের হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে। এখন তারা কথায় গিয়ে আশ্রয় নিবে এই চিন্তাই দিন কাটছে চরের প্রতিটি মানুষের। পদ্মার ভাঙ্গন অব্যহত থাকলেও রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড তথা উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত বাধ নির্মানের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

 
কিশোরপুর ঋষিপাড়া গ্রামের সুরেস দাস, নিরাপদ, সংকর, ভবেশ, সুকুমার, মদন, হরেন, নিরাঞ্জন, সুজন, মিঠন, রতন, কানন, অনন্ত, খোকন, উজ্জল, রেনুকা, অষ্ট্র, সচিনসহ ১৫টি পরিবার বসবাস করে। যে কোন সময় পদ্মা গর্ভে বিলিন যয়ে যাওয়ার আশংকায় রয়েছে তারা। তাদের অভিযোগ বাধ নির্মান করার জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠলেও আজ পর্যন্ত কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। গত কয়েক বছরে এই সকল এলাকায় হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে জানান তারা।
এছাড়া কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে লক্ষীনগর বেসরকারী (রেজিঃ) প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌমাদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যত্র সরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিতটি মসজিদ ও তিনটি বিড়িয়ার ক্যাম্প নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

 
১৯৭৭-৭৮ সালে বন্যা নিয়ন্ত্রনের বাধ নির্মানের পর আর কখনই কোন মেরামত করা হয়নি।

 

চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, শ্রোতে কয়েকটি বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। এবছর যেভাবে পদ্মার পাড় ভাঙ্গছে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা না করলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে।

 
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি বলেন, অধিকাংশ এলাকা পদ্মার মধ্যে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, গবাদি পশুসহ কয়েক বছরে হাজার হাজার একর ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। আগামী মিটিংএ কর্তৃপক্ষকে ভাঙ্গন বিষয়টি জানানো হবে বলে জানান তিনি।

 
পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস জানান, সড়ক ও নদীর তীর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য পাউবোতে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প আকারে পাস হয়ে আসলে ব্যবস্থা নিব।

 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, অতিশীগ্রই বাঁধ নির্মানের বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে জানানো হবে।
স/শ