বাঘায় সেই পেট্রলের দোকানে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৩, নির্বাক তাদের পরিবার

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় সেই পেট্রলের দোকানে আগুনে দগ্ধে মৃত্যু ৩ পরিবার নির্বাক হয়ে পড়েছে। পরিবার নিহতরা ৩জনই দিনমুজুর। মৃত ৩ জনের উপর চলে তাদের নিজ নিজ সংসার। কিন্তু আজ তারা নেই, কি করে সংসার চলবে, কিভাবে রেখে যাওয়া সন্তানদের মানুষ করবে, এই চিন্তার তাদের পরিবারের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া স্বামীকে হারিয়ে তাদের স্ত্রী ও পরিবার নিশ্ব হয়ে পড়েছে। তবে ইতিমধ্যেই তাদের দাফন সম্পূন্ন করা হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থেকে পান্না হোসেন (৪৫) এর মৃত্যু হয়। পান্না হোসেন পেশায় একজন ফুটপাতে চাউলের ব্যবসায়ী ছিলেন। বাবা ইমাজ আলী একজন সাধারণ মানুষ। মা হাফিজা বেগম গৃহীনি। তার ৮ বছরের ছেলে আবির হোসেন ও ৫ বছরের মেয়ে আবিদা খাতুন রয়েছে। বাড়ি উপজেলার মনিগ্রাম বাজারে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আখি খাতুন নির্বাক হয়ে পড়েছে। কোন কথায় বলছে না।

এর আগে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা নেয়ার পথে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কাছে রবিউল ইসলাম রবির মৃত্যু হয়। রবিউল ইসলাম রবি (৪০) মনিগ্রাম বাজারের মন্টু আলীর ছেলে। রবির বড় ভাই বিপ্লব হোসেন ৪ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে বড় ভাই এর স্ত্রীর সাথে রবির বিয়ে হয়। শেষ পর্যন্ত আগুনে দগ্ধ হয়ে রবিউল ইসলাম রবিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার দুটি সন্তান রয়েছে। রবিউল ইসলাম রবি একজন দিনমুজুর ছিলেন।

এদিকে রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শফিকুল ইসলাম (৪২)। শফিকুল ইসলাম উপজেলার তুলশিপুর গ্রামের দুখু মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন।

তাদের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শফিকুল ইসলাম এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কাছে রবিউল ইসলাম রবির মৃত্যু হয়। এদিকে রামেক থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পান্না হোসেনকে ঢাকার একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে সোমবার রাত সড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। তাদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম রবিকে সোমবার রাত ১০টার দিকে এবং পান্না হোসেনকে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) বেলা ১১টায় মনিগ্রাম হাইস্কুল মাঠে জানাযা শেষে দাফন করা হয়েছে।

বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, পেট্রলের দোকানে আগুন লাগার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বাঘা থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, আগুনে দগ্ধ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একটি জেলা প্রশাসক স্যার একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম বাজারে পেট্রলের দোকানের মালিক মনির হোসেন মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে ড্রাম খুলে পেট্রল আলাদা করতে থাকেন। এ সময় হঠাৎ আগুন ধরে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রন করতে এসে চেয়ারম্যান, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ৪০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বাঘা, চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স/অ