বাঘায় ভেজাল গুড় কারখানায় র‌্যাবের হানা, হাজার মন গুড় নদীতে নিক্ষেপ

বাঘা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারে আখের গুড় বিক্রীর সময় ৪৮ টি ভ্যান আটকসহ দু’টি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৫টি ভেজাল গুড়ের কারখানা চিহৃত করেছে র‌্যাব। এ অভিযানে প্রায় ১ হাজার মন গুড় জব্দ করা হয়।

পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আমান এসে চার জন গুড় প্রস্তুত কারির এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সেই সাথে জব্দকৃত গুড় আড়ানী বাজার সংলগ্ন বড়াল নদীতে ফেলে ধবংস করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর (এ.এস.পি) সজল আহাম্মেদ ও জামিল হোসেন।

বাঘার সবচেয়ে পুরানো এবং ঐতিহ্যপূর্ন হাটটির নাম আড়ানী। এখানে ব্রিটিশ আমল থেকে নানা রকম পন্যোর মধ্যে-হলুদ,পাট এবং গুড়ের ব্যবসা অন্যতম। তবে কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ অতিলাভের আসায় নিম্নমানের চিনি অথবা মোনালিস (সুগার মিলের গাদ) এর সাথে নানা রকম ক্যামিকেল যেমন- চুন, হায়ডস, ফিটকারী,ডালডা, আটা, আলু এবং বেলুন পাট নামে একটি গাছের ছাল ব্যবহার করে ভেজাল গুড় তৈরী করছেন। যা মানব দেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।

আড়ানী এলাকার আশরাফুল ইসলাম জানান, আড়ানী বাজার এ অঞ্চলে আখের গুড় তৈরীর জন্য আড়ানী বাজারে প্রতিদিন ৫- থেকে ৬ ট্রাক চিনি আনলোড করা হয়। যারা গুড়ের আড়ত পরিচালনা করে তাদের সংখ্যা ৩৫ জন। পাশা-পাশি যারা ভেজাল গুড় তৈরী করে তাদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। এই হাটে প্রতিদিন সর্ব নিম্ন হলেও ১৫শ’ মন আখের ভেজাল গুড় আমদানি করা হয়। এরপর সেই গুড় গুলো ট্রাক কিংবা ট্রেন যোগে চালান দেয়া হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, জয়পুরহাট, সিলেট ও বরিশাল-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর একটিই কারণ চিনির চেয়ে গুড়ের মুল্য অনেক বেশি।


রাজশাহী র‌্যাব ৫ এর (এ.এস.পি) সজল আহাম্মেদ ও জামিল হোসেন বলেন, বাঘা উপজেলা আড়ানী পৌর এলাকা এবং বাউসা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ভেজাল গুড় তৈরীর শতাধিক কারখানা আছে এমন তথ্যের ভিত্তিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত ৩০ জন সঙ্গীয় ফোর্স-সহ প্রথমে আমরা আড়ানী বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪৮ টি ভেজাল গুড়ের ভ্যান আটক করি।

এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খোদ্দ বাউসা এলাকার রাজন আলী (৩৫) ও তার ভাই সুজন আলী (৩০) এবং তার চাচা সাত্তার শা (৫৫) এর ভেজাল গুড় তৈরীর কারখানায় আভিযান চালায়। সেখানে গুড় তৈরীর উপকরণ হিসাবে একাধিক সরনজাম ও ক্যামিক্যাল জব্দ করি। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সাত্তার আলী পালিয়ে যায়। তবে আটকে পড়ে তার দুই ভাতিজা। পরে জেলা ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আমান আটক দুই জনের স্বীকারুক্তি শুনে উভয়ের ৫০ হাজার করে ১ লক্ষা টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন।

এর আগে আড়ানী পৌর এলাকার সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভ্যাজাল গুড়সহ আটক করা হয় জাহেদ আলী (৫৫) এবং ভ্যান চালক জালালকে। এ সময় তারা অপরাধ স্বীকার করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কাছ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড আদায় করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী একজিকিউট ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আমান বলেন, আটক চারজনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ভেজাল গুড়ের কারখানা এবং হাট মিলে ভ্যানে যে সব গুড় জব্দ করা হয়েছিল তার সবই বাজার সংলগ্ন বড়াল নদীতে ধবংস করা হয়েছে।

স/অ