বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গনে সরিয়ে নেওয়া হলো চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়


আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী):

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য তৃতীয় বারের মত সরিনয়ে নেওয়া হয়েছে চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। শনিবার (৩০ জুলাই) সকালে এ বিদ্যালয়ের মালামাল ভেঙ্গে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ফলে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশন দেন।

জানা যায়, বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে স্কুলটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্টিত হয়। প্রতিষ্টিত হওয়ার পর ভাঙ্গনের কারনে ১৯৯৮ সালে তিন কিলোমিটার, ২০১৬ সালে এক কিলোমিটার, ২০২২ সালের ২৯ জুলাই দেড় কিলোমিটার পূর্বদিকে স্থানান্তর করা হয়। স্কুলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২৩ জন। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু) শ্রেণি ১০ জন, প্রথম শ্রেণি ১৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণি ২৪ জন, তৃতীয় শ্রেণি ১৮ জন, চতুর্থ শ্রেণি ২১ জন, পঞ্চম শ্রেনি ৩৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছে ৩ জন।

বিদ্যালয়টি বর্তমানে যেখানে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেই স্থান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে চকরাজাপুর নামক স্থানে ১৯৭৩ সালে এই স্কুলটি  প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। পদ্মার ভাঙ্গনের কারণে তিন বার স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টির জন্য স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কোন জমিও পাওয়া যাচ্ছেনা। নিরুপায় হয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযমের বাড়ির আঙ্গিনায় স্কুলের আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে অস্থায়ী ঘর নির্মান করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলনে, পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের ওয়ালে এসে পৌছেছে। যে কোনো সময়ে পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। জরুরি ভিক্তিতে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তারপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিদর্শন শেষে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র স্থানান্তর করা শুরু করেছি। নিরুপায় হয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযমের বাড়ির আঙ্গিনায় বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে অস্থায়ী ঘর নির্মান করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিএম বাবলু দেওয়ান বলনে, বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে রাস্তাঘাট, আম বাগান, ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদ ভাঙতে ভাঙতে সম্পূর্ণটা পদ্মাগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। একটি বাঁধ নির্মান করা হলে চরের মানুষ উপকৃত হতেন।

এদিকে পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযমের আগের বাড়ি থেকে কালিদাসখালীর বাবলু শিকদারের বাড়ি পর্যন্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরয়িার আলম এমপি’র বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এলজিইডির সার্বিক তত্বাবধানে ২০১৪-১৫ র্অথবছরে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মান করা হয়েছিল। রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস।

ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় পদ্মার মধ্যে ৬টি চরে ২ হাজার ৪৮৬ গ্রাহকরে জন্য ৫৪ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুতের ব্যব¯’া করা হয়েছে। ভাঙ্গনের কারনে শতাধিক বিদ্যুতের খুটি উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

পদ্মার বাঁধ না দিলে দুই/এক বছররে মধ্যে ১৫টি চর বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, হাজার হাজার একর আমবাগান, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মামুনুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি বুঝে বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া ছিল।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনে বিদ্যালয়টি একমদ কিনারে এসেছে। যে কোন সময় পদ্মা গর্ভে চলে যাবে। তাদের আগেই অনুমতি নেওয়া ছিল। বিদ্যালয়ের মালামাল যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য একটি স্থানে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এস/আই